যানজটে বসে যা করতে পারেন

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘হোয়েন লাইফ গিভস ইউ লেমন, মেক লেমনেড’। তাই পরিস্থিতি যাই হোক, সেটার সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী।ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষকে পড়তে অসহ্য যানজটে। তাই যানজটে বসে বিরক্ত না হয়ে কাজে লাগাতে পারেন সেই সময়টা।
ছবি: সংগৃহীত

ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, 'হোয়েন লাইফ গিভস ইউ লেমন, মেক লেমনেড'। তাই পরিস্থিতি যাই হোক, সেটার সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। বর্তমানে ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষকে পড়তে হয় অসহ্য যানজটে। তাই যানজটে বসে বিরক্ত না হয়ে কাজে লাগাতে পারেন সেই সময়টা।

যানজটে আটকেপড়া সময়টা কীভাবে কাজে লাগাবেন সে বিষয়ে আজকের আলোচনা।

বই, ই-বুক, অডিও বুক

স্টিফেন কিং বলেন, 'বুকস আর এ ইউনিকলি পোর্টেবল ম্যাজিক।' প্রতিদিন যানজটে বা যাতায়াতের সময়গুলো কাজে লাগানোর ভালো উপায় হতে পারে বই পড়া। বই পড়ার গুরুত্ব বা উপকারিতা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে এক্ষেত্রে যদি আপনার হার্ডবুক পড়তে সমস্যা হয়, সহজেই মোবাইলে পিডিএফ এ ই-বুক পড়তে বা অডিও বুক শুনতে পারেন।

ছবি: সংগৃহীত

সংবাদ পড়া

প্রতিদিনের জীবনে হালনাগাদ তথ্য রাখার জন্য সংবাদ পড়া বা দেখার বিকল্প নেই। সংবাদপত্র পড়তে যদি আপনার অসুবিধা মনে হয় খুব সহজেই আপনার হাতের স্মার্ট ফোনেই অনলাইনে পড়ে ফেলতে পারেন প্রতিদিনের সংবাদগুলো।

লেখালেখি করা

বর্তমান যুগে বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখি করে মনের ভাব ছড়িয়ে দেওয়া যায়। লেখালেখি মন পরিষ্কার করতে সাহায্য করে, নতুন নতুন আইডিয়া তৈরিতে সহায়তা করতে পারে। নিয়মিত লিখলে লেখার দক্ষতাও উন্নত হয়। যে কেউ চাইলে যানজটে বসে না থেকে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখে ফেলতে পারেন।

টু ডু লিস্ট তৈরি

যারা চাকরি বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত যাতায়াত করেন, তাদের ক্ষেত্রে সকালের দিকেই সাধারণত এই দুর্বিসহ যানজটের মুখোমুখি হতে হয়। সেক্ষেত্রে সকালের এই নিয়মিত যানজটে বসে থেকে সারাদিনের পরিকল্পনা করে নিতে পারেন। সারাদিন কী করবেন তার টু ডু লিস্টের মাধ্যমে গুছিয়ে নিতে পারেন আপনার দিনটি।

নতুন একটি ভাষা শিখতে পারেন

নতুন ভাষা শেখা সবসময় মজাদার এবং একই সঙ্গে কগনিটিভ দক্ষতার জন্যেও বেশ উপকারী। বর্তমানে ডুওলিংগো, মেমরিজ, ব্যাবেলসহ বেশ কিছু অ্যাপ প্লেস্টোরে খুব সহজেই পাওয়া যায়।

পডকাস্ট

কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার আগ্রহ? তাহলে খুঁজে নিতে পারেন সেই বিষয়ের উপর কোনো পডকাস্ট সিরিজ। সার্চ ইঞ্জিনে সেই বিষয়ের পডকাস্ট লিখে সার্চ দিলেই সহজে পেয়ে যাবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত অডিও সিরিজ। যা আপনাকে বিরক্তিকর যানজটের মাঝেও বিনোদন দেবে।

ভিডিও কনটেন্ট

বর্তমানে মোবাইল ফোন একাধারে বই, রেডিও, সংবাদপত্র, টেলিফোন থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুর জায়গাই দখল করে নিয়েছে। ভিডিও কনটেন্ট এর দুনিয়ার বিশাল দরজাও খুলে দিয়েছে হাতের ছোট এই ডিভাইস। আর ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো সিনেমা হলকেই নিয়ে এসেছে হাতের মুঠোয়। তাই যানজটে বসে দেখতে পারেন, আপনার প্রিয় কোনো ফিল্ম, শিক্ষামূলক ডকুমেন্টারি, টিউটোরিয়াল ভিডিও, বিনোদনের কন্টেন্টসসহ অসংখ্য ধরনের ভিডিও কনটেন্ট।

বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ

প্রতিদিনের ব্যস্ত, ক্লান্তিকর জীবনে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে উঠে না। একটি ফোন কল বা টেক্সট মেসেজে নিয়মিত কারো খোঁজ নেওয়া সম্পর্ক আরও সুন্দর করে তুলতে পারে। যানজটে বসে এই কাজটি সেরে ফেলা যায়। এছাড়া নেটওয়ার্কিংয়েরও সুযোগ রয়েছে এই সময়টুকুতে।

ব্রেইন গেমস, পাজল

শরীরকে ফিট রাখতে যেমন ব্যায়ামের প্রয়োজন, মস্তিষ্ককে ফিট রাখতেও প্রয়োজন ব্যায়ামের। আর এর জন্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ব্রেইন গেমস আর ট্রেইনিং অ্যাপস। যেমন, পিক, সুডোকু, এলিভেটসহ অসংখ্য ব্রেইন গেমস বা ট্রেইনিং অ্যাপস সহজেই পেয়ে যাবেন আপনার ফোনে।

তবে অনেকে যানজটে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চোখ ব্যথা, মাথা ব্যথা, ঘাড় ব্যথার মত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হন।

বাংলাদেশ আই হসপিটাল মিরপুরের ডিরেক্টর অ্যান্ড কনসালটেন্ট প্রফেসর ডা. মো.সাফী খান বলেন, ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলোর মধ্যে মোবাইল ব্যবহারে সমস্যা একটু বেশি হয়। দীর্ঘ সময় মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখ ড্রাই হয়, চোখের মাসলগুলে দুর্বল হয়, তাতে করে আল্টিমেটলি মাথা ব্যথা হয়, কারো চোখ ভারী ভারী লাগে। ধীরে ধীরে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ রাখলে আরাম লাগে, কারো চোখে পানি পড়ে, জ্বালাপোড়া করে, এসব সিম্পটম হয়।'

তিনি বলেন, 'অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে ঘাড় বা নেক পেইন হয়। আমরা যে পজিশনে বসে দেখি, ঘাড় বাঁকা করে, হাত উঁচু করে, এতে আমাদের পজিশনটা খুব ভালো থাকে না বলে, দেখা যায় মাথা ব্যথা হয়, ঘাড়ে ব্যথা, হাতের মাসলে পেইন হয়, শোল্ডার জইন্টে পেইন হয়।'

এই সমস্যা থেকে প্রতিকার হিসেবে তার পরামর্শ হলো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা মোবাইল না দেখা, কিছুক্ষণ পর পর ৩-৫ মিনিট ব্রেক নিতে হবে। বসার পজিশনে ঠিক রাখতে হবে। কুঁজো হয়ে বসে মোবাইলে তাকালে চোখের সমস্যা হয়ে থাকে।

Comments