অ্যালার্জিক রাইনাইটিস প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি একিউআই সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানির দিকে। এ কারণে বাংলাদেশে অ্যালার্জিজনিত সর্দি বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে আক্রান্ত হওয়া খুবই সাধারণ বিষয়।
প্রতীকী ছবি

প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি একিউআই সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তলানির দিকে। এ কারণে বাংলাদেশে অ্যালার্জিজনিত সর্দি বা অ্যালার্জিক রাইনাইটিসে আক্রান্ত হওয়া খুবই সাধারণ বিষয়।

বিভিন্ন ধরণের বাহ্যিক উপকরণ ও পরিবেশের সুনির্দিষ্ট কিছু প্রভাবে এই অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। যেমন— নির্মাণাধীন স্থাপনা, আর্দ্র আবহাওয়া, ফুলের রেণু, পশুপাখির চুল ও খড়ের সংস্পর্শে আসা।

কীভাবে বুঝবেন

এই রোগের উপসর্গের মধ্যে রয়েছে নাক বন্ধ হওয়া, কাশি ও বারবার হাঁচি দেওয়া (বিশেষ করে সকালে), নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়া, চোখ জ্বলা এবং কোনো গন্ধ না পাওয়া (এটি একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের উপসর্গও হতে পারে)।

এই অ্যালার্জির কারণে নাকের ওপরে একটি বাঁকা কালো দাগও তৈরি হতে পারে। এ রকম সমস্যা দেখা দিলে তা বিনা চিকিৎসায় রেখে দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট, বয়স্কদের নাকের পলিপসহ অন্যান্য জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরণের সমস্যায় ফাংশনাল এন্ডোস্কপিক সার্জারি (এফইএসএস) অথবা পলিপেকটোমির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে কানে কম শোনা বা ভোঁ ভোঁ শব্দ শোনার মতো (টিনিটাস) সমস্যাও হতে পারে অনেকের ক্ষেত্রে।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিসকে টাইপ ১ হাইপারসেনসিটিভ বা অতিসংবেদনশীল রোগ বলা হয়। এ বিষয়ে একটু ভুল ধারণা হলো- যার এ ধরনের অ্যালার্জি আছে, তিনি সারা বছর জুড়েই অতিসংবেদনশীল থাকেন। কিন্তু বাস্তবে, অনেকের মৌসুমি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় ছাড়া বাকি সময় থাকে না।

এ ছাড়াও, এখানে একটি বংশগত ব্যাপারও কাজ করে। যদি কারও বাবা ও মা উভয়েরই অ্যালার্জিক রাইনাইটিস থাকে, তাহলে তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রেও একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ৪০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। বাবা ও মায়ের মধ্যে যেকোনো একজনের এ রোগ থাকলে সন্তানের একই রোগে আক্রান্তের সম্ভাবনা ২০ শতাংশ থাকে।

প্রতিরোধের উপায়

প্রশ্ন আসে, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস প্রতিরোধের কোনো উপায় আছে কি? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ।

আপনার ক্ষেত্রে অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী উপকরণ বা 'অ্যালার্জেন' কোনটি বা কোনগুলো, তা চিহ্নিত করতে হবে এবং সেটি বা সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, ধুলা এড়িয়ে চলা এবং ঘর পরিষ্কার রাখা সবচেয়ে উপযুক্ত প্রতিকার ব্যবস্থা। যদি কারো ফুলের পরাগে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে তাকে বাগানে কাজ করার সময় সতর্ক থাকতে হবে।

যদি কারও কুকুর বা বেড়ালের সংস্পর্শে গেলে অ্যালার্জি হয়, তাহলে পশমযুক্ত প্রাণী ও পাখি থেকে দূরে থাকা উচিৎ। কিছু অ্যালার্জি একটি নির্দিষ্ট মৌসুমেই শুধু হয়। সে ক্ষেত্রে, ওই সময়টায় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কিছু পেশার মানুষ সহজে অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হন। যেমন চিত্রকর ও যারা খড় নিয়ে কাজ করেন (মূলত কৃষক)।

তবে সকল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়, তাহলে অবশ্যই উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ।

অ্যালার্জিক রাইনাইটিস নিশ্চিত করতে সাধারণত প্রিক টেস্ট নামের একটি পরীক্ষা করা হয়। কারো চামড়ায় সুঁই ফোটানোর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে যদি সেখানে একটি ঘনীভূত চাকা দেখা যায়, তাহলে দেহে অ্যালার্জির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ছাড়াও, যেহেতু এটি একটি আইজিই (ইমিউনোগ্লোবিউলিন) নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া, রক্ত পরীক্ষায় যদি আইজিইর পরিমাণ বেড়ে যায়, সে ক্ষেত্রেও অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা যায়। অর্থাৎ, উপযুক্ত চিকিৎসা প্রক্রিয়া নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন ধরণের পরীক্ষা ও সমন্বিত ফলাফল বিশ্লেষণ করা খুবই জরুরি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস খুবই সাধারণ ও ক্ষতিকারক একটি রোগ। তবে এর বেশ কয়েক ধরনের চিকিৎসা রয়েছে। সতর্ক থেকে ও অ্যালার্জেন এড়িয়ে চলে একজন মানুষ নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। এ ক্ষেত্রে 'প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ বেশি উপকারী' প্রবাদটি খুবই উপযোগী।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

17h ago