টোকিও অলিম্পিকস, সপ্তম দিন: পদক জিতলেন যারা

সপ্তম দিনে নিষ্পত্তি হবে ১৩টি খেলার মোট ২১টি ইভেন্টের।

টোকিও অলিম্পিকের সপ্তম দিনে শুক্রবার নিষ্পত্তি হয় ১৩টি খেলার (আর্চারি, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, ক্যানু স্ল্যালম, সাইক্লিং, ফেন্সিং, জুডো, রোয়িং, শুটিং, সাঁতার, টেবিল টেনিস, টেনিস ও ট্র্যাম্পোলিন জিমন্যাস্টিকস) মোট ২১টি ইভেন্টের।

আসরে সপ্তম দিনে এসে পয়েন্ট তালিকার সেরা পাঁচে কোনো পরিবর্তন হয়নি। আগের মতো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন চীন। ১৯টি স্বর্ণ, ১০টি রৌপ্য ও ১১টি ব্রোঞ্জ নিয়ে মোট ৪০টি পদক পেয়ে শীর্ষে আছে তারা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপান পেয়েছে ১৭টি স্বর্ণ, ৪টি রৌপ্য ও ৭টি ব্রোঞ্জ নিয়ে মোট ২৮টি পদক। ১৪টি স্বর্ণ, ১৬টি রৌপ্য ও ১০টি ব্রোঞ্জে মোট ৪১টি পদক নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

চতুর্থ স্থানে থাকা রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটির (আরওসি) সংগ্রহ ১০টি স্বর্ণ, ১৪টি রৌপ্য ও ১০টি ব্রোঞ্জ নিয়ে মোট ৩৪টি পদক। ৯টি স্বর্ণ, ২টি রৌপ্য ও ১১টি ব্রোঞ্জ নিয়ে মোট ২২টি পদক নিয়ে তাদের পরই অবস্থান করছে অস্ট্রেলিয়া। 

টেবিল টেনিস

পুরুষদের একক ইভেন্টে স্বর্ণ পদক জিতেছেন চীনের মা লং। স্বদেশী ফান ঝেংডংকে হারিয়ে এ পদক জিতে নেন তিনি। অল চাইনিজ ফাইনালে ৪-২ সেটের ব্যবধানে জয় পান লং। চাইনিজ তাইপের লিন ইয়ুন-জুকে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন জার্মানির দিমিত্রিজ ওভটচারভ।

অ্যাথলেটিক্স

পুরুষদের ১০০০০ মিটারে জমজমাট লড়াই শেষে স্বর্ণ জিতেছেন ইথিওপিয়ার সেলেমন বারেগা। ২৭ মিনিট ৪৩.২২ সেকেন্ড সময় নিয়ে প্রথম হয়েছেন তিনি। তার চেয়ে মাত্র ০.৪১ সেকেন্ড সময় বেশি নিয়ে রৌপ্য পদক জিতেছেন উগান্ডার জশুয়া চেপটেগেই। ব্রোঞ্জ পদক পাওয়া চেপটেগেইর স্বদেশী জ্যাকব কিপলিমোও সময়ে নিয়েছেন মাত্র ০.৬৬ সেকেন্ড বেশি।

ফেন্সিং

পুরুষদের দলগত এপে ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেছে দক্ষিণ কোরিয়া। ফাইনালে রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটিকে হারিয়েছে তারা। ৪৫-৩৬ পয়েন্টের ব্যবধানে মেস জিতে নেয় কোরিয়ার ফেন্সাররা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল তারা। এ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছে জার্মানি।

টেনিস

পুরুষদের টেনিস ডাবলসে অল ক্রোয়েশিয়ান ফাইনালে স্বর্ণ জিতেছে নিকোলা মেকতিচ ও মাতে পাভিচ জুটি। অলিম্পিক ইতিহাসে এ নিয়ে তৃতীয়বার একই দেশের কোনো খেলোয়াড় বা দল ফাইনালে মোকাবেলা করে। আর ফাইনালে স্বদেশী মারলিন কিলিচ ও ইভান দদিগ জুটিকে ৬-৪, ৩-৬ ও (১০)-(৬) পয়েন্টের ব্যবধানে হারিয়েছে মেকতিচ-পাভিচ জুটি। এ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছে নিউজিল্যান্ডের মার্কাস দানিয়েল ও মাইকেল ভেনাস জুটি। 

জুডো

২০১৬ রিও অলিম্পিকের পর পুরুষদের +১০০ কেজি ইভেন্টে এবারও স্বর্ণ পদক জিতে নিলেন চেক প্রজাতন্ত্রের লুকাস ক্রপালেক। বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নও তিনি। ফাইনালে এদিন জর্জিয়ার গুলাম টুশিশভিলিকে হারিয়ে এ পদক জিতেন লুকাস। দুটি শিডো ওয়ার্নিং পেলেও দুটি ওয়াজা-আরিতে একটি ইপ্পন পেয়ে গেলে স্বর্ণ নিশ্চিত হয়ে যায় তার। এ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন ফ্রান্সের টেডি রিনার ও রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটির তামেররান বাশায়েভ।

জুডো

নারীদের +৭৮ কেজি ইভেন্টে স্বর্ণ পদক জিতেছেন জাপানের সোনি আকিরা। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের চ্যাম্পিয়ন কিউবার ইদালিজ ওর্তিজকে রৌপ্য পদক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ফাইনালে তিনটি শিড ওয়ার্নিং পাওয়ায় একটি ইপ্পন পেয়ে যান আকিরা। তাতেই স্বর্ণ নিশ্চিত হয়ে যায় আকিরার। এ ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছেন ফ্রান্সের রোমানে দিকো ও আজারবাইজারের ইরিনা কিন্দজেরস্কা।

আর্চারি

মেয়েদের ব্যক্তিগত ইভেন্টে সোনা জিতেছেন ফেভারিট দক্ষিণ কোরিয়ার আন সান। অঘটনের শঙ্কা উড়িয়ে তিনি আরওসির এলেনা ওসিপোভাকে হারিয়েছেন টাইব্রেকারে। ৫-৫ সেট পয়েন্টে সমতা থাকায় শুট অফে একটি করে তীর ছোঁড়ার সুযোগ পান দুই আর্চার। আন ১০ স্কোর করলেও রুপা জেতা ওসিপোভা পারেন কেবল ৮ তুলতে। ইতালির লুসিল্লা বোয়ারি পেয়েছেন ব্রোঞ্জ।

ব্যাডমিন্টন

মিশ্র দ্বৈতে সোনা ও রুপা দুটোই গেছে চীনের ঘরে। এক ঘণ্টা ৯ মিনিটের ম্যারাথন লড়াইয়ে নির্ধারিত হয়েছে ফল। ওয়াই লিউ ওয়াং ও ডং পিং হুয়াং জুটি জিতেছে সোনা। তাদের কাছে ২১-১৭, ১৭-২১ ও ২১-১৯ ব্যবধানে হেরে রুপা পেয়েছে সি ওয়েই ঝেং ও ইয়া কিয়ং হুয়াং জুটি। ব্রোঞ্জ জিতেছে স্বাগতিক জাপানের ইউতা ওয়ান্তানাবে ও আরিসা হিগাশিনো জুটি।

ক্যানু স্ল্যালম

ছেলেদের ব্যক্তিগত কায়াক স্ল্যালমে সোনা জিতেছেন চেক প্রজাতন্ত্রের জিরি প্রসকাভেচ। স্লোভাকিয়ার জ্যাকুব গ্রিগার পেয়েছেন রুপা। ব্রোঞ্জ অর্জন করেছেন জার্মানির হান্নেস এইনিয়ার।

ট্র্যাম্পোলিন জিমন্যাস্টিকস

মেয়েদের ট্র্যাম্পোলিনে চীনের ঝু শুয়েইং ৫৬.৬৩৫ স্কোর করে সোনা জিতেছেন। তার স্বদেশি লিউ লিংলিং অল্প ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে হয়েছেন দ্বিতীয়। তার স্কোর ৫৬.৩৫০। গ্রেট ব্রিটেনের বাইরনি পেজ পেয়েছেন ব্রোঞ্জ (৫৫.৭৩৫)। সবশেষ দুই অলিম্পিকে সোনা জেতা কানাডার রোজি ম্যাকলেনান ধারাবাহিকতা হারিয়ে হয়েছেন চতুর্থ।

শুটিং

এবারের আসরে নিজের দ্বিতীয় সোনার পদকের দেখা পেয়েছেন আরওসির ভিতালিনা বাতসারাশকিনা। মেয়েদের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের পর ২৫ মিটার এয়ার পিস্তলেও তিনি হয়েছেন সেরা। দক্ষিণ কোরিয়ার কিম মিনজাং জিতেছেন রুপা। ব্রোঞ্জ পেয়েছেন চীনের জিয়াও জিয়ারুইশুয়ান। ফাইনালে বাতসারাশকিনা ও মিনজাং সমান ৩৮টি লক্ষ্যভেদ করে নতুন অলিম্পিক রেকর্ড স্থাপন করেন। পরে শুটঅফে ৪-১ ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন বাতসারাশকিনা।

সাইক্লিং বিএমএক্স

গ্রেট ব্রিটেনের বেথানি শ্রাইভার সেরা হয়েছেন মেয়েদের বিএমএক্স রেসিংয়ে। এদিন কোনো রেসেই হারেননি তিনি। তার চেয়ে মাত্র ০.০৯ সেকেন্ড পিছিয়ে থেকে রুপা জিতেছেন কলম্বিয়ার মারিয়ানা পাইয়ন। ব্রোঞ্জ পেয়েছেন নেদারল্যান্ডসের মেরেল স্মুলডারস।

চোট নিয়েও বিএমএক্স রেসিংয়ে সোনা জিতেছেন নেদারল্যান্ডসের নিয়েক কিমান। ছবি: বিএমএক্স সুপারক্রস টুইটার

সাইক্লিং বিএমএক্স

চোট নিয়েও ছেলেদের বিএমএক্স রেসিংয়ে সোনা জিতেছেন নেদারল্যান্ডসের নিয়েক কিমান। হাঁটুতে চিড় থাকলেও দমে যাননি তিনি। রুপা জিতেছেন গ্রেট ব্রিটেনের কাই হোয়াইট। ব্রোঞ্জ পেয়েছেন কলম্বিয়ার কার্লোস আলবার্তো রামিরেজ। চোটের কারণে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের কনর ফিল্ডস। তার অনুপস্থিতিতে ফ্রান্সের তিন রাইডারকে এগিয়ে রাখা হচ্ছিল। কিন্তু তাদের কেউই পদক জিততে পারেননি।

সাঁতার

ছেলেদের ২০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলেতে সেরা হয়েছেন চীনের শুন ওয়াং। ১ মিনিট ৫৫.০০ সেকেন্ড সময় নিয়ে এশিয়ান রেকর্ড গড়েছেন তিনি। গ্রেট ব্রিটেনের ডানকান স্কট রুপা ও সুইজারল্যান্ডের জেরেমি ডেস্প্ল্যানচেস ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।

সাঁতার

হিটেই রেকর্ড গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এমা ম্যাককেওন। ফাইনালে সেটা ভেঙে নতুন অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে মেয়েদের ১০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে সোনা জিতেছেন তিনি। ম্যাককেওন সময় নিয়েছেন ৫১.৯৬ সেকেন্ড। ৫২ সেকেন্ডের মধ্যে এই ইভেন্ট শেষ করা মাত্র দ্বিতীয় সাঁতারু তিনি। অলিম্পিকে এটি তার প্রথম ব্যক্তিগত সোনার পদক। দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন হংকংয়ের সিওভান হগি। তৃতীয় হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ারই কেট ক্যাম্পবেল।

সাঁতার

ছেলেদের ১০০ মিটার ব্যাকস্ট্রোকের পর ২০০ মিটারেও সোনা জিতেছেন আরওসির ইভজেনি রাইলভ। ১ মিনিট ৫৩.২৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে সাঁতার শেষ করেন তিনি। আগের রেকর্ডটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের টেইলর ক্ল্যারির দখলে। ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ১ মিনিট ৫৩.৪১ সেকেন্ড সময় নিয়েছিলেন তিনি। সবশেষ ছয় অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো এই ইভেন্টে সোনা জিততে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির রায়ান মারফি পেয়েছেন রুপা। ব্রোঞ্জ উঠেছে গ্রেট ব্রিটেনের লুক গ্রিনব্যাঙ্কের গলায়।

মেয়েদের ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে সেরা হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার তাতিয়ানা শোয়েনমেকার। ছবি: অলিম্পিক টুইটার

সাঁতার

মেয়েদের ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে সেরা হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার তাতিয়ানা শোয়েনমেকার। ২ মিনিট ১৮.৯৫ সেকেন্ড সময় নিয়েছেন তিনি। আট বছর ধরে টিকে থাকা পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন তিনি। ২০১৩ সালে ডেনমার্কের মোলার পেডারসন সময় নিয়েছিলেন ২ মিনিট ১৯.১১ সেকেন্ড। ২৪ বছর বয়সী শোয়েনমেকারের হাত ধরে টোকিও অলিম্পিকে প্রথম সোনার পদকের স্বাদ পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। যুক্তরাষ্ট্রের দুই সাঁতারু লিলি কিং ও অ্যানি ল্যাজর যথাক্রমে রুপা ও ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।

রোয়িং

মাঝপথে এগিয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ড লিড ধরে রেখে ছেলেদের দলগত (আট জন) ইভেন্টে সোনার পদক জিতেছে। তারা সময় নিয়েছে ৫ মিনিট ২৪.৬৪ সেকেন্ড। জার্মানি দ্বিতীয় ও গ্রেট ব্রিটেন তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে।

রোয়িং

মেয়েদের দলগত (আট জন) ইভেন্টে সোনা জিতেছে কানাডা। তারা সময় নিয়েছে ৫ মিনিট ৫৯.১৩ সেকেন্ড। রুপা জিতেছে নিউজিল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে ব্রোঞ্জ পেয়েছে চীন।

রোয়িং

ছেলেদের একক স্কালে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে সোনার পদক জিতেছেন গ্রিসের স্তেফানোস এনতুস্কোস। তিনি সময় নিয়েছেন ৬ মিনিট ৪০.৪৫ সেকেন্ড। রোয়িংয়ে সোনা জেতা প্রথম গ্রিক অ্যাথলেট তিনি। নরওয়ের কিয়েতিল বোর্চ রুপা ও ক্রোয়েশিয়ার দামির মার্তিন ব্রোঞ্জ পেয়েছেন।

মেয়েদের একক স্কালে ৭ মিনিট ১৩.৯৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে গড়ে সোনা জিতেছেন এমা টুইগ। ছবি: এএফপি

রোয়িং

ব্যক্তিগত চতুর্থ অলিম্পিকে এসে অবশেষে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য স্পর্শ করতে সমর্থ হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের এমা টুইগ। মেয়েদের একক স্কালে ৭ মিনিট ১৩.৯৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে সোনা জিতেছেন তিনি। ২০১৪ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেও অলিম্পিকের গত দুই আসরে অপ্রত্যাশিতভাবে চতুর্থ স্থানে থেকে শেষ করেছিলেন টুইগ। এই ইভেন্টে আরওসির হান্না প্রাকাতসেন দ্বিতীয় ও অস্ট্রিয়ার লবনিগ ম্যাগদালেনা তৃতীয় হয়েছেন।

Comments

The Daily Star  | English

Submarine cable breakdown may disrupt Bangladesh internet

It will take at least 2 to 3 days to resume the connection

24m ago