টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার হারানোর আনন্দ বাংলাদেশের
টার্নিং আর মন্থর উইকেটে খুব বড় পুঁজি ছিল না। তবে উইকেটের ধরনই দিচ্ছিল আশার পালে হাওয়া। সহায়ক কন্ডিশন পেয়ে নাসুম আহমেদ, সাকিব আল হাসান, শেখ মেহেদী হাসানদের স্পিন হয়ে উঠল ভয়ংকর। অস্ট্রেলিয়ানরা খাবি খেল তাতেই। আর টি-টোয়েন্টিতে তাদেরকে প্রথমবার হারানোর আনন্দে ভাসল বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দিনটি নিশ্চতভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের জন্য। মাত্র ১৩১ রান তুলেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তারা জিতেছে ২৩ রানে। সফরকারী অজিরা গুটিয়ে গেছে মোটে ১০৮ রানে।
বাংলাদেশ দলের জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা বাঁহাতি স্পিনার নাসুমের। ৪ ওভার বল করে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তিনি। ২৪ রানে ১ উইকেট পান সাকিব। শেখ মেহেদী ১ উইকেট পেতে খরচ করেন ২২ রান। দুই পেসার শরিফুল ইসলাম আর মোস্তাফিজুর রহমানও উইকেট পান। শরিফুল শেষদিকে ২ নেন উইকেট। দারুণ বল করে মাত্র ১৬ রান দিয়ে ২ উইকেট দখল করেন মোস্তাফিজ।
ওয়ানডে আর টেস্টে একটি করে জয় ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। টি-টোয়েন্টিতে আগের চার দেখায় বাংলাদেশ ছিল জয়শূন্য। তবে সেই চারটি ম্যাচই ছিল বিশ্বকাপের আসরে। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে দুই দলের প্রথম দেখাতেই জয় পেল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
অল্প পুঁজি পাওয়ায় শুরুতেই উইকেট দরকার ছিল বাংলাদেশের। মন্থর, টার্নিং উইকেটের ভাষা ঠিকই বুঝে নিয়ে প্রথম থেকেই স্পিন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অফ স্পিনার শেখ মেহেদীর একদম প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান অ্যালেক্স ক্যারি।
ভেতরে ঢোকা বলটা বুঝতেই পারেননি অজি ওপেনার। পরের ওভারে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ বল করতে আসতেই ছক্কা মেরে দিয়েছিলেন আরেক ওপেনার জশ ফিলিপি। অতিরিক্ত আগ্রাসন কাল হয় তার। নাসুমকে পরে বেরিয়ে মারতে গিয়ে হয়ে যান স্টাম্পড। তৃতীয় ওভারে বল হাতে তুলে প্রথম বলেই মোজেজ হেনরিকেসকে বোল্ড করে দেন সাকিব।
১১ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৩ উইকেট ফেলে তখন উড়ছে বাংলাদেশের। দুই অভিজ্ঞ মিচেল মার্শ আর ম্যাথু ওয়েড তখন দলের বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টায়।
বিপর্যয়ে পড়া সফরকারীরা পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে আনতে পরে কেবল ২৮ রান। মার্শ সিঙ্গেলস-ডাবলস বের করতে পারলেও ওয়েড ছিলেন জড়সড়। থিতু হতেই পারছিলেন না। অনেকগুলো ডট বল খেলায় বাড়ছিল চাপ।
নাসুমকে পেয়ে সেই চাপ সরাতে গেলেন। লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল স্কয়ার লেগ দিয়ে অনায়াসে চার পাঠানো যেত কিংবা ছাড়লে ওয়াইড হতো। কিন্তু ওয়েড পাঠালেন শর্ট লেগে। সেখানে ঝাঁপিয়ে দারুণ ক্যাচ হাতে জমান মোস্তাফিজ।
খানিক পর আবার ভাগ্য কথা বলে নাসুমের হয়ে। এবার অ্যাস্টন অ্যাগার অনেক পেছনে গিয়ে খেলার চেষ্টায় হয়ে যান হিট উইকেট।
বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে টিকে ছিলেন মার্শ। বিপদ বাড়াতে থাকা এই ব্যাটসম্যানকেও ছাঁটেন নাসুম। তার বলে ওড়াতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন মার্শ। ডিপ মিড উইকেট থেকে অনেকখানি ছুটে তা হাতে জমান শরিফুল।
এরপর ম্যাচ বের করার মতো কেউ ছিলেন না অজিদের। অ্যাস্টন টার্নার থাকলেও তার একার পক্ষে সম্ভব ছিল না, হয়নিও। ১০ রান করে তিনি আউট হন মোস্তাফিজের বলে। অজিদের টেল এন্ডারদের এরপর আর থামাতে অসুবিধা হয়নি বাংলাদেশের।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে গিয়ে ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। মিচেল স্টার্ককে দ্বিতীয় বলে ছক্কা মেরে দিয়েছিলেন নাঈম শেখ। কিন্তু এরপরই কুঁকড়ে যান তিনি। আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার ব্যাট বল লাগাতে না পেরে অস্থির হয়ে জশ হ্যাজেলউডকে উইকেট ছুঁড়ে দেন।
নাঈম টিকে গেলেও দ্রুত রান আসছিল না। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশও করে কেবল ৩৩ রান। স্টার্ককে আরও এক ছক্কা মারলেও নাঈম ফেরেন ২৯ বলে ৩০ রান করে।
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ চারে উঠে ছিলেন না একদম সাবলীল। নড়বড়ে অবস্থায় ৫ রানে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। সামলে নিয়ে ছক্কা মেরেছিলেন। কিন্তু রান-বলের ব্যবধান কমাতে পারেননি পরেও। ২০ বলে ২০ রান করে থামেন তিনি।
সাকিব মনোযোগ দেন টিকে থাকায়। ধীরে ধীরে আসতে থাকে রান। তার ব্যাটও ঝড়ের আভাস দিয়ে পরে মেটাতে পারছিল না দাবি। নুরুল হাসান সোহান মন্থর উইকেটের দাবি মেনে হতে পারেননি স্মার্ট। ৪ বলে ৩ রান করে দেন ক্যাচ। সাকিব পরে ফেরেন ৩৩ বলে ৩৬ রানে।
শামীম পাটোয়ারীও জ্বলে উঠতে পারেননি। স্টার্কের দারুণ ইয়র্কারে স্টাম্প ভেঙে যায় তার। ছয়ে নেমে দলের চাহিদা মেটান আফিফ হোসেন। এই তরুণের ১৭ বলে ২৩ রানের ইনিংসেই ১৩০ ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশের পুঁজি। দল পায় লড়াইয়ের রসদ, যা দিয়ে আসে কাঙ্ক্ষিত জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩১/৬ (নাঈম ৩০, সৌম্য ২, সাকিব ৩৬, মাহমুদউল্লাহ ২০, সোহান ৪, আফিফ ২৩, শামীম ৪, শেখ মেহেদী ৭*; স্টার্ক ২/৩৩, হ্যাজেলউড ৩/২৪ , জাম্পা ১/২৮, টাই ১/২২, অ্যাগার ০/২২)।
অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ১০৮ (ক্যারি ০, ফিলিপি ৯, মার্শ ৪৫, হেনরিকেস ১, ওয়েড ১৩, অ্যাগার ৭, টার্নার ৮, স্টার্ক ১৪, টাই ০, জাম্পা ০, হ্যাজেলউড ২*; শেখ মেহেদী ১/২২, নাসুম ৪/১৯, সাকিব ১/২৪, মোস্তাফিজ ২/১৬, শরিফুল ২/১৯, মাহমুদউল্লাহ ০/৬)।
ফল: বাংলাদেশ ২৩ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: নাসুম আহমেদ।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচ সিরিজ বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
Comments