চাকাভা, রাজা, বার্লের ব্যাটে জিম্বাবুয়ের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি

মঙ্গলবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আগে ব্যাট করতে গিয়ে ২৯৮ রানে অলআউট হয়েছে জিম্বাবুয়ে। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করা বাংলাদেশের সামনে তাই বড় লক্ষ্য। 
Sikandar Raza & Rayan Burl
ছবি: জিম্বাবুয়ে টুইট

দারুণ শুরু করে জিম্বাবুয়েকে টেনে নিলেন রেজিস চাকাভা। তাকে থামিয়ে খেলায় ফিরেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ দিকে ঝড় তুলে সিকান্দার রাজা আর রায়ান বার্লের ব্যাটে তারা পেয়ে গেল চ্যালেঞ্জিং পুঁজি।

মঙ্গলবার হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে আগে ব্যাট করতে গিয়ে ২৯৮ রানে অলআউট হয়েছে জিম্বাবুয়ে। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করা বাংলাদেশের সামনে তাই বড় লক্ষ্য।  দলের হয়ে ৯১ বলে সর্বোচ্চ ৮৪ রান এসেছে চাকাভার ব্যাট থেকে। 

রাজা ৫৪ বলে ৫৭ আর বার্ল মাত্র ৪৩ বলেই করেন ৫৯ রান। এই দুজনের তাণ্ডবে শেষ ১০ ওভারে ৯৪ রান তুলে স্বাগতিকরা।

এবার টস হেরে ব্যাটিংয়ে শুরুটা দেখেশুনেই করতে পেরেছে জিম্বাবুয়ে। সিরিজে এই প্রথমবার তাদের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ৩০ রানের বেশি। তবে শুরুর ভিতটা হেলায় হারান টাডিওয়ানাশে মারুমানি। পেসার দিয়ে কিছু হচ্ছে না দেখে স্পিন এনেছিলেন তামিম। তাতেই কাজ হয়েছে।

সাকিব আল হাসানের সোজা বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবডব্লিউ হয়ে ফেরত যান এই বাঁহাতি। নবম ওভারে ৩৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

সিরিজে দারুণ ছন্দে থাকা কিপার ব্যাটসম্যান চাকাভাকে এদিন ওপেন করতে পাঠানো হয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের মূল্য তিনি দিয়েছেন দারুণভাবে।

দ্বিতীয় উইকেটেও ব্র্যান্ডন টেইলরকে নিয়ে অনায়াসে এগুচ্ছিলেন তিনি। আগের ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনক আউটের শিকার হওয়া টেইলর এদিনও শুরুটা পান ভাল। বড় কিছুরই আভাস মেলে তাদের ব্যাটে।

কিন্তু শক্ত ভিতটা নষ্ট করার জন্য টেইলর এবার নিজেকে ছাড়া কাউকেই দুষতে পারবেন না। কোন বোলারই যখন তাদের বিপদে ফেলতে পারছেন না নিজেই নিলেন উইকেট বিলিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব।  ৪২ রানের জুটির পর মাহমুদউল্লাহর অতি নীরিহ এক বলে আয়েশি শটে ক্যাচ উঠিয়ে দেন মিড অফে।

বড় এই উইকেট পড়লেও চারে নেমে ডিওন মেয়ার্স বুঝতে দেননি একটুও। জমে যায় চাকাভা-মেয়ার্স জুটি। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এদিন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ছিলেন বেশ আলগা। তার বল থেকে বেরিয়ে যায় সহজ রান। প্রথম ৫ ওভারে ওভারপ্রতি প্রায় ১০ করে রান বিলিয়ে দেন তিনি।

স্পিনারদের এক, দুই করে নিয়ে সামলে সাইফুদ্দিনকে পিটিয়ে রান এগিয়ে নেন মেয়ার্স-চাকাভা। এই জুটি বাংলাদেশের চিন্তার কারণই হয়ে যাচ্ছিল। মাহমুদউল্লাহর বলে শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গে ৭১ রানের জুটি।

মাহমুদউল্লাহর ভেতরে ঢোকা এক ডেলিভারিতে দ্রুত রান বের করার চেষ্টায় স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন ৩৮ বলে ৩৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলা মেয়ার্স। খানিকপর মোস্তাফিজুর রহমানের নতুন স্পেলে পড়ে আরেক উইকেট। আগের ম্যাচে ফিফটি করা ওয়েসলি মাধভেরে মোস্তাফিজের কাটার পড়তে না পেরে সহজ ক্যাচ দেন শর্ট মিড অনে।

দারুণ খেলছিলেন চাকাভা। উইকেটে চারপাশেই দ্রুত রান বের করছিলে তিনি। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটা তিন অঙ্কের দিকেই এগুচ্ছিল। তাসকিন আহমেদের বলে সাংঘাতিক এক ভুলে ডুবলেন তিনি। স্টাম্প বরাবর ফুল লেংথের বল অদ্ভুত কায়দায় অনসাইডে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হলেন, উপড়ে গেল তার স্টাম্প।

৯১ বলে ৭ চার, ১ ছক্কায় ৮৪ করে তিনি ফিরতে ব্যাকফুটে চলে যায় স্বাগতিকরা। ১৭২ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ায় চ্যালঞ্জিং পুঁজি পাওয়ার আশা ফিকে হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু রাজা ছিলেন, একাদশে ফেরা রায়ান বার্লও দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের ইতিবাচক অ্যাপ্রোচের সঙ্গে বাংলাদেশের আলগা বোলিং মিলে গেলে ঘুরে যায় গল্প। শেষ ১০ ওভারেই আসে ৯৪ রান!   রাজা থিতু হতে সময় নিয়েছিলেন বেশ খানিকটা। এক পর্যায়ে ৬ রান করেছিলেন ২১ বলে। কিন্তু সব পুষিয়ে পরে ৪৯ বলে তুলে নেন ফিফটি। ৪৮তম ওভারে গিয়ে আউট হওয়ার আগে করেছেন ৫৪ বলে ৫৭ রান।

৬ষ্ঠ উইকেটে বার্লের সঙ্গে আসে তার ১১২ রানের জুটি। স্পিনারদের বল রাজা সামলেছেন দারুণভাবে। পেসারদের বলে রান বাড়ানো হয়েছে সহজ। লম্বা সময় পর ফিরে আগের ম্যাচে একটু জড়তা ছিল তার ব্যাটে। সব কাটিয়ে আজ মারলেন ৭ চার আর সাকিবকে বিশাল এক ছয়।

বার্লের ইনিংসও অদ্ভুত বৈপরীত্যে ভরা। প্রথম ১২ রান করতে লেগেছিল ২৫ বল। অথচ এরপর আউট হওয়ার সময় তার নামের পাশে লেখা থাকল ৪৩ বলে ৫৯!  অর্থাৎ পরের ১৮ বলেই তুলেছেন ৪৭। যার বেশিরভাগটাই সাইফুদ্দিনকে পিটিয়ে। ৪ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কা মেরেছেন তিনি। 

৪৭তম ওভারেই দুই ছক্কায় তুলে নেন ২২ রান। আউট হয়েছেন সাইফুদ্দিনের বলেই। ফ্লিক করে এক ছয়ের পর সোজা আরেকটি ছক্কা মারার চেষ্টায় ধরা পড়েন বাউন্ডারি লাইনে। পুরো ম্যাচে বাজে বল করা সাইফুদ্দিন স্লগ ওভারে ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তোলার তাড়ায় পেয়ে যান আরও দুই উইকেট। ডোনাল্ড টিরিপানো আর টেন্ডাই চাতারা তার বলে মারতে গিয়ে হন বোল্ড। টপাটপ উইকেট পড়তে থাকায় শেষ দুই ওভারে আসে কেবল ১০ রান। 

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ৮ ওভারে ৮৭ রান বিলিয়ে সাইফুদ্দিনই সবচেয়ে খরুচে। তাসকিনকে পাওয়া যায়নি সেরা ছন্দে। সাকিব ভাল করলেও একাদশে ফেরা মোস্তাফিজের ধার দেখা যায়নি সেভাবে। বরং সবচেয়ে ভাল বল করেছেন দুইশোতম ওয়ানডে খেলতে নামা মাহমুউল্লাহ। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে: ৪৯.৩ ওভারে ২৯৮ (চাকাভা ৮৪, মারুমানি ৮, টেইলর ২৮, মেয়ার্স ৩৪, মাধভেরে ৩, রাজা  ৫৪, বার্ল  ৫৯, জঙ্গুই ৪* , টিরিপানো ০, চাতারা ১, মুজারাবানি ০  ; তাসকিন , সাইফুদ্দিন ৩/৮৭ ,  মোস্তাফিজ ৩/৫৭, মাহমুদউল্লাহ ২/৪৫,  সাকিব ১/৪৬, মোসাদ্দেক ০/১৩)

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

16h ago