গাইবান্ধার জরাজীর্ণ ক্রীড়াঙ্গন

অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের খেলাধুলার প্রতি উৎসাহী না করেন এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহ যদি অন্যদিকে ঘুরে যায়, তাহলে দেশের জন্য ভালো খেলোয়াড় পাব কীভাবে?
ছবি: স্টার

সানাউল হাবিব সাজ্জাদ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অধীনে জেলা পর্যায়ের একজন কোচ। প্রায় দুই দশক আগে তিনি গাইবান্ধায় তরুণদের কোচিং করানো শুরু করেছিলেন। তখন প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী তার তত্ত্বাবধানে ক্রিকেটার হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় ছিল। কিন্তু বর্তমানে তার শিষ্যদের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০ জনে। তাদের মধ্যে মেয়ে মাত্র ১৫ থেকে ২০ জন। দ্য ডেইলি স্টারের মোস্তফা সবুজ একটি সাক্ষাৎকারে এই অবনতির কারণ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন অভিজ্ঞ কোচ সাজ্জাদের কাছে। এর চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো:

দ্য ডেইলি স্টার (স্টার): গাইবান্ধা জেলা ক্রিকেটের পাইপলাইনের অবস্থা কী?

সানাউল হাবিব সাজ্জাদ (সাজ্জাদ): আগের মতো ভালো নেই। আমরা ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীদের হারিয়ে ফেলছি।

স্টার: এই অনাগ্রহের পেছনে কারণ কী?

সাজ্জাদ: শিক্ষার্থীরা ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা মূলত খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের আগ্রহ পরিবর্তিত হয়েছে। তরুণরা মাদক ও সেলফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বেশিরভাগই এখানে-সেখানে আড্ডা দেয়। এছাড়া, শহরে যারা থাকে, তারা প্রাইভেট টিউশনে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকে। বিকালে কোচিং ক্লাসের কারণে তারা মাঠে আসতে পারে না। ১০-১৫ বছর আগে শহরাঞ্চল থেকে অনেক বেশি শিক্ষার্থী আসত। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে গেছে। এখন আমার ৬০ শিক্ষার্থীর প্রায় সবাই তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে অনুশীলনে আসে। আর তারা আসে উপজেলা পর্যায় ও গ্রাম এলাকা থেকে।

স্টার: জেলার মাঠের সুযোগ-সুবিধা কি পর্যাপ্ত?

সাজ্জাদ: গাইবান্ধার উপজেলা পর্যায়ে ও জেলা শহরে খেলার মাঠ রয়েছে। তাছাড়া, আমাদের জেলা স্টেডিয়ামও (শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম) রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, আমি প্রতিদিন শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম ব্যবহার করতে পারি না। কারণ, এটি প্রাইভেট একাডেমির কোচদের দখলে থাকে। আর সেখানে নিয়মিত প্রচুর খেলাধুলার কার্যক্রমও পরিচালিত হয়।

স্টার: বিসিবি থেকে কী কী সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন?

সাজ্জাদ: ২০ বছর আগে বিসিবি থেকে সামান্য সুযোগ-সুবিধা পেলেও ক্রিকেটের প্রতি তরুণদের আগ্রহের কারণে তা পুষিয়ে যেত। এখন বিসিবি সুযোগ-সুবিধা বাড়ালেও খেলোয়াড় সংকটের কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সঙ্গে এটাও বলতে হয়, বিসিবি আমাকে ২৪টি ক্রিকেট বল, একটি ক্যাচিং ব্যাট এবং কিছু প্যান্ট ও জার্সি সরবরাহ করলেও তা যথেষ্ট নয়।

স্টার: বিসিবির একজন কোচ হিসেবে আপনার সবচেয়ে বড় সংকটের জায়গা কোনটি?

সাজ্জাদ: আমি আগেই বলেছি, আমরা দিন দিন শিক্ষার্থী হারাচ্ছি। বিসিবি আমাদের যে বেতন দেয়, তা খুবই কম। এটি অত্যন্ত বৈষম্যমূলকও। আমি যেখানে প্রতি মাসে ১৮,১০০ টাকা বেতন পাই, সেখানে বিভাগীয় পর্যায়ের কোচরা ৫৪ হাজার টাকা মাসিক বেতন পান। বিসিবি অনেক দিন বেতন বৃদ্ধি বন্ধ রেখেছে। একজন জেলা কোচ এই সামান্য অর্থ দিয়ে কীভাবে সংসার চালাবেন? এমনকি সরকারি অফিসের একজন পিয়নও আমাদের চেয়ে বেশি বেতন পায়। আমি মানুষের কাছে আমার বেতন বলতে লজ্জা ও অস্বস্তি বোধ করি।

স্টার: গাইবান্ধা থেকে খেলোয়াড়রা জাতীয় পর্যায়ে আসছে না কেন?

সাজ্জাদ: আমার কিছু শিক্ষার্থী আছে, যারা বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলছে। কিন্তু (সর্বোচ্চ পর্যায়ে) পৌঁছাতে না পারার মূল কারণ হলো তরুণরা তাদের ইচ্ছাশক্তি হারিয়ে ফেলছে। এটি শিগগিরই ক্রিকেটসহ আমাদের দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রকে প্রভাবিত করবে। অভিভাবকরা যদি তাদের সন্তানদের খেলাধুলার প্রতি উৎসাহী না করেন এবং শিক্ষার্থীদের আগ্রহ যদি অন্যদিকে ঘুরে যায়, তাহলে দেশের জন্য ভালো খেলোয়াড় পাব কীভাবে?

Comments

The Daily Star  | English
Temperature rise in Dhaka last 30 years

An April way hotter than 30-year average

Over the last seven days, temperatures in the capital and other heatwave-affected places have been consistently four to five degrees Celsius higher than the corresponding seven days in the last 30 years, according to Met department data.

11h ago