'ওয়েস্টার্ন ব্লক' নিয়ে রমিজের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
নিরাপত্তা শঙ্কায় নিউজিল্যান্ড সফর বাতিল করার পর ইংল্যান্ডের কাছ থেকে একইরকম ঘোষণা আসা প্রত্যাশিতই ছিল রমিজ রাজার কাছে। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ ও ক্ষুব্ধ পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) নতুন চেয়ারম্যান। তার মতে, 'ওয়েস্টার্ন ব্লক' সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানের প্রতি কাঙ্ক্ষিত মানসিকতা প্রদর্শন করে না। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাঠের লড়াইয়ে তাদেরকে হারিয়েই প্রতিশোধ নিতে চান তিনি।
নিউজিল্যান্ডের পথে হেঁটে আগের দিন সোমবার পুরুষ ও নারী দলের পাকিস্তান সফর বাতিল করেছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, 'খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের মানসিক স্বাস্থ্য এই মুহূর্তে আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে ওই অঞ্চলে ভ্রমণের বিষয়ে তৈরি হওয়া সতর্কতা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।'
এরপর এক ভিডিও বার্তায় ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন পিসিবি প্রধান রমিজ। এমন কিছু হবে সেটার ধারণা তারা পেয়েছিলেন আগেই, 'ইংল্যান্ড সফর বাতিল করায় আমি ভীষণ হতাশ। তবে এটা প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ওয়েস্টার্ন ব্লক একজোট হয়ে থাকে এবং পরস্পরকে সমর্থন দেয়। নিরাপত্তা হুমকি ও ধারণার কথা বলে যেকোনো সিদ্ধান্তই নেওয়া যায়। আমাদের ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রথমে কী ধরনের হুমকির মুখোমুখি হয়েছে তা নিয়ে কোনো তথ্য ভাগাভাগি না করেই নিউজিল্যান্ড চলে গেছে। এরপর (ইংল্যান্ডের) এমন ঘোষণা অনুমিতই ছিল।'
'আমাদের চাওয়া হলো, আমাদের দেশে ক্রিকেট যেন বন্ধ হয়ে না যায় এবং ক্রিকেটসমাজ যদি পরস্পরের স্বার্থ না দেখে, তাহলে তা থেকে আর কী লাভ! নিউজিল্যান্ড ও পরে ইংল্যান্ড (সফর বাতিল করল)। এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজও অনিশ্চয়তার মুখে। আর অস্ট্রেলিয়াও ইতোমধ্যে পুনর্বিবেচনা করছে (সফরের ব্যাপারে)। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড- এরা একই ব্লকের।'
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত দুবার ইংল্যান্ড সফর করেছে পাকিস্তান। পাশাপাশি নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজেও সফর করেছে তারা। তাই ইসিবির সফর বাতিলের সিদ্ধান্তকে বিশ্বাসঘাতকতা বলেও মনে করছে পিসিবি।
উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে শিক্ষা নিতে চান সাবেক ক্রিকেটার রমিজ, 'তবে আমাদের জন্য এটা একটা শিক্ষা। কারণ তারা যখন সফরে আসে তখন আমরা তাদেরকে আপ্যায়ন করতে সীমা ছাড়িয়ে যাই এবং প্রশ্রয় দেই। অথচ আমরা যখন তাদের দেশে যাই, কঠোর কোয়ারেন্টিনের সব নিয়ম মানি এবং মৃদু অপমানও সহ্য করি। কিন্তু এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে। সেটা হলো, এখন থেকে আমরা ততখানিই করব, যতটুকু পর্যন্ত আমাদের স্বার্থ জড়িত আছে।'
'আমাদেরকে উন্নতি করতে হবে এবং ক্রিকেট অর্থনীতিকে বিস্তৃত করতে হবে যাতে এই দেশগুলো আমাদের সঙ্গে খেলতে আগ্রহী হয়। আমাদের এই লক্ষ্যের কারণ হলো নিজেদের খেলোয়াড়দের আরও বেশি পারিশ্রমিক দেওয়া এবং আরও বেশি সম্মান পাওয়া।'
পরপর দুটি সফর বাতিল হওয়ায় নিশ্চিতভাবেই বড় রকমের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে পিসিবি। সংশ্লিষ্টদের অনেকের মতে, ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে দেড় থেকে আড়াই কোটি ডলার। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জিম্বাবুয়ে এবং দ্বিতীয় সারির বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দলের সঙ্গে সিরিজ আয়োজনের ভাবনা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু কিছু জটিলতা থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড একত্রিত হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে রেখেছে বলে দাবি রমিজের, 'আমরা অভিযোগ কার কাছে করব? আমরা ভেবেছিলাম যে, তারা আমাদের আপন। কিন্তু তারা আমাদেরকে নিজেদের করে গ্রহণ করেনি।'
'তারা (অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা) পিএসএলে যখন আসে, তখন তারা ভীত বা ক্লান্ত হয় না। কিন্তু সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানের প্রতি তাদের ভিন্ন ধরনের মানসিকতা রয়েছে।'
আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ রাউন্ডে পাকিস্তানের সঙ্গে একই গ্রুপে রয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ডের সঙ্গে তাদের দেখা হতে পারে সেমিফাইনাল বা ফাইনালে।
প্রতিশোধ হিসেবে রমিজের চাওয়া বিশ্বকাপে ওই দলগুলোর বিপক্ষে জয়, 'আমরা বিশ্বকাপে যাব এবং যেখানে আমাদের লক্ষ্য ছিল একটি দল- আমাদের প্রতিবেশী (ভারত), সেখানে এখন আরও দুটি দল যুক্ত হলো- নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড। শক্তি সঞ্চয় করো এবং একটা মানসিকতা গড়ো যে, আমরা হারব না। কারণ আমাদের সঙ্গে ওরা ঠিক করেনি। আর আমরা মাঠেই প্রতিশোধ নিতে হবে।'
Comments