আনকোরা রজতের সেঞ্চুরিতে ফাইনালের আশা বেঁচে রইল বেঙ্গালুরুর
আইপিএলে নিজের মাত্র ১১তম ম্যাচ খেলতে নামা রজত পতিদার তুলে নিলেন ঝড়ো সেঞ্চুরি। অভিজ্ঞ দিনেশ কার্তিকের ব্যাটও হাসায় বড় পুঁজি পেল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। লক্ষ্য তাড়ায় কেএল রাহুল লম্বা সময় উইকেটে থেকে চালালেন লড়াই। কিন্তু লখনউ সুপার জায়ান্টসের অধিনায়কের প্রচেষ্টা পেল না পূর্ণতা। তাদেরকে বিদায় করে আসরের ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখল বেঙ্গালুরু।
বুধবার রাতে উত্তেজনাপূর্ণ রান উৎসবের এলিমিনেটর ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে ফ্যাফ ডু প্লেসির দল। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে তারা জিতেছে ১৪ রানে। নির্ধারিত ২০ ওভারে তাদের করা ৪ উইকেটে ২০৭ রানের জবাবে লখনউ ৬ উইকেটে ১৯৩ রান পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।
২৮ বছর বয়সী রজত মাত্র ৫৪ বলে ১১২ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা এই ক্রিকেটারের ব্যাট থেকে আসে ১২ চার ও ৭ ছক্কা। কার্তিক ৫ চার ও ১ ছয়ের সাহায্যে ২৩ বলে করেন অপরাজিত ৩৭ রান। পঞ্চম উইকেটে অবিচ্ছিন্ন জুটিতে তারা মোটে ৪১ বলে আনেন ৯২ রান। বেঙ্গালুরুর জয়ে বল হাতে শেষদিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন দুই পেসার হার্শাল প্যাটেল ও জস হ্যাজেলউড।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই অধিনায়ক ডু প্লেসিকে হারায় বেঙ্গালুরু। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের তালুবন্দি হয়ে মহসিন খানের শিকার হন তিনি। রানের খাতা খুলতে পারেননি এই দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা ব্যাটার।
ধাক্কা সামলে বিরাট কোহলিকে নিয়ে ৪৬ বলে ৬৬ রান যোগ করেন তিনে নামা রজত। জুটিতে তার ভূমিকা ছিল অগ্রণী। ক্রুনাল পান্ডিয়ার করা ষষ্ঠ ওভারে ৩ চার ও ১ ছক্কা মেরে তাণ্ডবের সূচনা করেন এই ডানহাতি। ওই ওভার থেকে সব মিলিয়ে আসে ২০ রান।
ভারতের সাবেক দলনেতা কোহলি শুরু থেকেই ছিলেন খোলসে বন্দি। তাকে হাত খোলার সুযোগ দেননি আভেস খান। ২৪ বলে ২৫ রানের মন্থর ইনিংস খেলে থার্ড ম্যানে মহসিনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। এরপর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মহিপাল লমরোর বিদায় নেন দ্রুত।
১৪ ওভারে বেঙ্গালুরুর রান ছিল ১১৭। ওই অবস্থান থেকে মাঝারি মানের সংগ্রহ পাওয়াই ভবিষ্যৎ বলে মনে হচ্ছিল তাদের। কিন্তু শেষ ৬ ওভারে বিস্ফোরণ ঘটান রজত। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন কার্তিক। তাতে স্কোরবোর্ডে ওঠে ৯০ রান। ওঠে অবশ্য দুজনকেই আগেভাগে সাজঘরে ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল লখনউ। ১৫তম ওভারে কার্তিক ব্যক্তিগত ২ এবং পরের ওভারে রজত ব্যক্তিগত ৭২ রানে জীবন পান।
ছক্কা হাঁকানোর পর লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণোইয়ের বলে মিডউইকেটে ক্যাচ তুলেও বেঁচে যান রজত। সীমানার কাছে দীপক হুডার হাতের ফাঁক গলে উল্টো হয়ে যায় চার। পরের তিন বলেও রজতের ব্যাট থেকে আসে বাউন্ডারি- ছয়, চার ও ছয়।
ভাগ্য সহায় ছিল চোখ ধাঁধানো ঢঙে খেলতে থাকা রজতের। ১৮তম ওভারে ব্যক্তিগত ৯৩ রানে তার ফের তোলা ক্যাচ হাতে জমাতে ব্যর্থ হন মনন বোহরা। ব্যাটের কানায় লেগে ওঠা বলটি লুফে নেওয়া অবশ্য ছিল ভীষণ কঠিন। ওই বলে দৌড়ে ২ রান নেওয়া রজত পরের বলেই মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মেরে দর্শনীয় কায়দায় পূরণ করেন শতরান। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি।
জুতসই সূচনা দরকার থাকলেও তা পায়নি লখনউ। বিধ্বংসী হওয়ার সুযোগ না দিয়ে মোহাম্মদ সিরাজ ফিরিয়ে দেন ডি কককে। বোহরার মারমুখী ব্যাটিং স্থায়ী হয়নি হ্যাজেলউডের বলে পরাস্ত হয়ে।
৪১ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দলকে পথে ফেরাতে থাকেন রাহুল ও দীপক। তবে রাহুল অনেক বল খরচ করে ফেলেন আগ্রাসী হওয়ার আগে। এতে বেড়ে যায় ওভারপ্রতি রান তোলার চাপ। শেষে আর সেটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে ওঠেনি লখনউ।
১৫তম ওভারে ২ ছক্কা হজমের পর দীপককে গুগলিতে বোল্ড করে দেন শ্রীলঙ্কান লেগ স্পিনার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। ১ চার ও ৪ ছক্কায় তিনি করেন ২৬ বলে ৪৫ রান। তার আউটে ভাঙে ৬১ বলে ৯৬ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি।
শেষ ১৮ বলে লখনউয়ের প্রয়োজন ছিল ৪১ রান। তবে মার্কাস স্টয়নিসকে ডানা মেলতে দেননি হার্শাল। এরপর টানা দুই বলে রাহুল ও ক্রুনালকে ফিরিয়ে হ্যাজেলউড প্রশস্ত করেন বেঙ্গালুরুর জয়ের রাস্তা। এক পর্যায়ে, ৪২ বলে ৪৮ রানে থাকা রাহুল স্কুপ করতে গিয়ে ধরা পড়েন শর্ট লেগে। ৫৮ বলে ৩ চার ও ৫ ছয়ে তিনি আউট হন ৭৯ রানে। শেষ ওভারে কোনো রোমাঞ্চ তৈরি করতে পারেননি এভিন লুইস ও দুশমন্থা চামিরা।
আগামী শুক্রবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে বেঙ্গালুরু মুখোমুখি হবে রাজস্থান রয়্যালসের। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায়। ওই ম্যাচের জয়ী দল আগামী রোববার আইপিএলের ফাইনালে একই ভেন্যুতে লড়বে গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে।
Comments