৬৬তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব
৬৬তম বার্লিন চলচ্চিত্র আসরে কারা পুরস্কৃত হয়েছে তা এতদিনে আপনাদের সবারই জানা হয়ে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত এই চলচ্চিত্র উৎসবের খবর কারও আর অজানা নেই। আমারও এই ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছিল। বিজয়ীদের নিয়ে না বলে আমি বরং আমার অভিজ্ঞতাটুকু শেয়ার করতে চাই আপনাদের সঙ্গে।
ক্লুনির প্রতি প্রেম এবং স্বপ্নভঙ্গ
জর্জ ক্লুনির প্রতি আমার অগাধ ভালোবাসা সেই ছোটবেলা থেকেই। সবসময়ই মনে হতো একদিন না একদিন তার সঙ্গে আমার দেখা হবেই। এমন স্বপ্ন নিয়ে এত বড় হয়ে যাওয়ার পর স্বপ্ন সত্যি হওয়ার আনন্দে ভাসছিলাম যখন শুনলাম যে এবারের ৬৬তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে জর্জ ক্লুনি আসছেন। কোয়েন ব্রাদার্স নির্মিত এবং জর্জ ক্লুনি অভিনীত হেইল সিজার সিনেমাটি দিয়ে পর্দা উঠছিল এই আসরের। প্রথমবার বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে পারার আনন্দ আর সেই সঙ্গে প্রথম দিনই স্বপ্নের মানুষের সাক্ষাৎ পাওয়ার সুযোগ আমাকে যারপরনাই আনন্দিত করে তুলেছিল।
প্রথম দিন প্রেস মিটে জর্জ ক্লুনির সাক্ষাৎ। প্রেস মিটে শুধুই সাংবাদিকরা আমন্ত্রিত থাকলেও ভিড় ঠেলে ভেতরে যাওয়াটা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি বাকি যে সময়টা এই উৎসবের বিভিন্ন প্রেস মিটে গিয়েছি তার কোনোটিতেই আর এমন ভিড় পাইনি। এমনই বেশিরভাগ সময় সামনের সারির কিছু চেয়ার ছাড়া বাকি সব খালিই পড়ে থাকত। এদিন সম্ভবত আমার মতো লোকেরা সেখানে বেশি ভিড় করেছিল, যারা জর্জ ক্লুনির প্রেমে মত্ত। শুধূ ওই রুম না, জানালাসহ যেদিক দিয়ে যতটুকু চোখ পৌঁছচ্ছে, তার সবটা জুড়েই শুধু মানুষের ভিড়। বাইরের যারা ছিল তারাও অপেক্ষা করছিল কোনোভাবে যদি একটু ভেতরে গিয়ে তাকে দেখা যায়। ছোটবেলা থেকেই তারকাদের প্রতি আমার আকর্ষণ অনেক বেশি। কিন্তু এই সেলফির জুগেও কাউকে সামনে পেলেই তার সঙ্গে সেলফি আমি কখনোই তুলি না। এমনকি আগে থেকে জানা থাকলেও অনেক জায়গাতে যাওয়ার পরও তারকাদের সঙ্গে আমার ছবি তোলা হয়ে ওঠে না। জানি না এটা আমার ভালো অভ্যাস না খারাপ। আরেকটি সমস্যা আমার আছে, তা হলো বেশি আকর্ষণ যাদের প্রতি আছে তাদের সামনে দেখলে বেশি উত্তেজনায় কথা বলতে না পারা। যেদিন ক্লুনির সঙ্গে দেখা হওয়ার দিন তার আগের রাতে অনেক কিছু চিন্তা করে রেখেছিলাম তাকে বলব বলে। কিন্তু বিধিবাম প্রেস মিটে বসে আর কিছুই বলা হয়ে উঠল না। তাকে শুধু দেখতেই থাকলাম। যা-ই হোক, রেড কার্পেটে অথবা সিনেমা হলে হয়তো কিছু কথা বলতে পারব বা অন্তত একটি অটোগ্রাফ বা ফটোগ্রাফ নিতে পারব বলে আশায় ছিলাম। কোয়েন ব্রাদার্সের সব থেকে বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন জর্জ ক্লুনি এবং তাদের খুবই পছন্দের অভিনয় শিল্পীও তিনি। কোয়েন ব্রাদার্সের সিনেমা সম্পর্কে বলার কিছু নেই বা আমি এত ছোট মানুষ হয়ে এত বড় পরিচালকের সিনেমা নিয়ে মন্তব্য করার সাহসও করি না। কিন্তু একটা কথা না বললেই নয়, তা হলো হেইল সিজার সিনেমাটি আমার সঙ্গে সঙ্গে হলে থাকা সব দর্শককেই করেছে ভীষণ রকমের আশাহত। আমার প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণই ব্যর্থ হয়েছে সিনেমাটি। সিনেমা শেষে দর্শকরা হল থেকে বের হয়ে সমালোচনায় আর ক্ষোভে আছড়ে পড়ল। সামনে যদি কোয়েন ব্রাদার্সকে পেত তাহলে সব রাগ ঝেড়ে ঠা-া হতে পারত এমন অবস্থা। সিনেমাটিতে যা বলতে চেয়েছে তা বলতে সফল হলেও অন্যান্য সিনেমায় যেমন একটা ম্যাজিক থাকে, কোনো কারণে এই সিনেমায় তা ছিল না। এখানে প্রিমিয়ারের মাধ্যমে সবখানেই তাদের এই সিনেমা মুক্তি পায়। সিনেমা খারাপ লাগলেও ক্লুনির প্রতি ভালোবাসায় কমতি হয়নি মোটেও।
আমার কান চলচ্চিত্র উৎসবে দু’বার যোগ দেয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তারা নিয়মের দিক থেকে যতটা শক্ত সেই হিসাবে বার্লিন অনেক বেশি সহজ। আপনি আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সব অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন। বার্লিনের রেড কার্পেটে ক্লুনি সাংবাদিক এবং দর্শকদের সামনে এলেন তার নব্য বিবাহিতা স্ত্রী আমল ক্লুনির সঙ্গে। চারিদিকে থাকা হাজার হাজার জোড়া চোখ জর্জ ক্লুনির দিকে থাকলেও ক্লুনির চোখ একমাত্র তার স্ত্রীর দিকেই ছিল। স্ত্রীর পোশাক থেকে সব দিকে আগলে রাখতেই প্রচ- ব্যস্ত ছিল সে। চারপাশের অটোগ্রাফ আর ফটোগ্রাফ শিকারিদের চিৎকার কোনোভাবেই পৌঁছায়নি তার কানে। রেড কার্পেটে ক্যামেরার সামনে স্ত্রীকে নিয়ে নিবিড়ভাবে পোজ দিতে তার ব্যস্ততা। অডিটোরিয়ামের ভেতরে হলে ঢুকলে তাকে পাওয়ার আশাটুকুই বেঁচে ছিল শেষ পর্যন্ত আর সেটা নিয়েই ভেতরে ঢুকেছিলাম সিনেমা দেখতে। চূড়ান্তভাবে স্বপ্নভঙ্গ হলো তখন, যখন ভেতরে ঢুকেও তার সান্নিধ্য পেলাম না। ভেতরে ক্লুনি আর স্ত্রী হাত ধরে পাশাপাশি বসে নিজেদের মতো করে সিনেমাটি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কাছাকাছি গিয়ে নানাভাবে তার দৃষ্টি আকর্ষণের অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে অবশেষে পেছনে বসে বসে সিনেমা দেখেই সান্ত¡না পাওয়ার চেষ্টা করলাম। আর সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা তো জানালাম আগেই। আমার স্বপ্নের নায়ক এভাবেই আমাকে পাত্তা না দিয়ে ভীষণভাবেই স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল। শেষ পর্যন্ত এটা বলে নিজেকে সান্ত¡না দিলাম যে, দুটো দিন তাকে সামনাসামনি দেখলাম, একই স্থানে সময় পার করলাম এবং একই হলে তাদের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখলাম। সব কিছুর পরও জর্জ ক্লুনির প্রতি আমার প্রেম অব্যাহত রইল।
মেরিল স্ট্রিপ!
প্লেনে ঢাকা থেকে বার্লিনের সরাসরি ফ্লাইট নেই। যে কোনো এয়ারলাইন্সই আপনাকে প্লেন পরিবর্তন করিয়ে নিয়ে যাবে। এই পরিবর্তনের সময় বেশ দীর্ঘই হয়। সব মিলিয়ে প্রায় সারা দিনই লেগে যায় পৌঁছতে। এই দীর্ঘ সময় বসে থেকে নষ্ট না করে সিনেমা দেখেই পার করছিলাম। দ্যা আওয়ার সিনেমাটি দেখেছিলাম এর মধ্যে। সিনেমাটিতে মেরিল স্ট্রিপ, নিকোল কিডম্যানসহ আরো অনেক বড় তারকাই আছেন। মেরিল স্ট্রিপের অভিনয় সম্পর্কে কিছু বলার নেই। কী করে এমন সাবলীলভাবে অভিনয় করা যায় তা তাকে দেখলেই বোঝা যায়। তার অভিনয় দেখলে অভিনয় করছে বলে মনে হয় না। যেন বাস্তবেই তিনি সেই অবস্থানে আছেন বলে মনে হয়। এমনই আরেকজন হচ্ছেন ফরাসি অভিনেত্রী ইসাবেলা হুপার্ড। বার্লিনে যাওয়ার আগে এই উৎসব সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেখে যাইনি। ফলে কে থাকছে আর কে থাকছে না তার বিশদ কোনো ধারণা আমার ছিল না। সেখানে পৌঁছানোর পর শুনলাম যে জুরি বোর্ডের প্রধান হিসেবে আছেন মেরিল স্ট্রিপ। শুনে তো আমি আহ্লাদে আটখানা। তার সঙ্গে ১১ দিন এখানে দেখা হবে ভেবেও আমি পুলকিত হচ্ছিলাম। তাকে দেখতে পাব এই উৎসবের যেখানে-সেখানে, যখন-তখন। আশা অনুযায়ী তাই ঘটল। প্রথম দিনই জুরির সব সদস্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। জুরি প্রধান হিসেবে মেরিল স্ট্রিপই সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তার আচরণ এত অমাইক, যা অকল্পনীয়। আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল, তিনি একটু বেশি সচেতন ছিলেন যাতে তিনি যে অনেক বড় একজন অভিনয় শিল্পী তা তার আচরণে প্রকাশ না পায়। তারা আচরণ প্রকাশ করছিল, সে এই উৎসবের আয়োজকদের একজন। ১১ দিন ধরে তার সঙ্গে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন সময় দেখা হতো। তার সঙ্গে দেখা হলেই খুব সুন্দরভাবে একটি হাসি দিচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, আমরা অনেক দিনের পরিচিত এবং কাছের মানুষ। ক্লুনিকে কাছে পাওয়ার আক্ষেপ থাকলেও মেরিল স্ট্রিপের এই আচরণ তা আর মনেই পড়তে দিচ্ছিল না। হয়তোবা মেরিল স্ট্রিপের এখন প্রেমিক নেই এজন্য অন্যদিকে মনোযোগ দিতে পারছিলেন। প্রেমিক থাকলে তখন হয়তো ক্লুনির মতো সব মনোযোগ থাকত সঙ্গীর প্রতিই।
এই প্রথম মেরিল স্ট্রিপ কোথাও জুরি প্রধান হয়েছিলেন। এর আগে তিনি একবার বলেছিলেন, কীভাবে জুরিরা কাউকে ভালো বা খারাপ বিচার করেন তা তিনি বোঝেন না। এই বিষয়টি তার কাছে খুবই দুর্বোধ্য। স্বাভাবিকভাবেই এবার তাকে জুরি প্রধান হিসেবে পেয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল এটিই যে, কীভাবে তাহলে তিনি এবার জুরির দায়িত্ব পালন করবেন। স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আসলে কিছুই করব না। এখানে আমি অভিভাবকের মতো। সাতজনের জুরি বোর্ডের রায় যেদিকে বেশি হেলবে, আমি সেদিকেই নিজের রায় দেব।’ এরপরের প্রশ্ন ছিল জুরি বোর্ডে মেয়েদের প্রাধান্য নিয়ে। সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, জুরি বোর্ডে যেহেতু মেয়ে বেশি তাহলে কি এবার শ্রেষ্ঠ সিনেমার পুরস্কার কোনো নারীবাদী সিনেমা পেতে যাচ্ছে? উত্তরে তিনি বলেন, ‘মোটেই তা নয়। যেটি পুরস্কার পাওয়ার জন্য যোগ্য হবে সেটিই পুরস্কার পাবে। এটি নারীবাদী হতেও পারে, নাও পারে। জুরি বোর্ডের সদস্য নারী বেশি হওয়াতে এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে না। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে নারীর প্রতি অন্যায়ের বিপক্ষে।’ সবশেষে দেখা গেল বিজয়ী সিনেমার ফোকাস ছিল অভিবাসী সমস্যা নিয়ে এবং সেই সঙ্গে এই উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছিল তাদের প্রতিই। আরো বেশি সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই প্রথমবারের মতো কোনো একটি ডকুমেন্টারি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতে নেয় এই উৎসবের মাধ্যমে। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জন্য নির্ধারিত স্বর্ণ ভালুক জিতে নেয় এই ডকুমেন্টারিটি।
চলচ্চিত্র উৎসব নিয়ে দু’কথা
আমাদের সবার ধারণা হয় যে, চলচ্চিত্র উৎসব মানেই একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতেই পুরস্কার দেয়া হয়, আসলে তা নয়। মূল একটি ক্যাটাগরির পাশাপাশি আরো অনেক ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা চলে বিভিন্ন নামে। বার্লিনও তার বাইরে নয়। মূল বিভাগের বাইরেও নানারকম বিভাগে পুরস্কৃত করা হয় বিভিন্নজনকে। এর সঙ্গে আরেকটি বড় ব্যাপার হচ্ছে ফিল্ম বাজার। এখানে সারা পৃথিবীর চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকেরা আসে। এটা অনেক বড় একটি ব্যাপার এবং আয়োজন। চলচ্চিত্রে যে যেদিকেই জড়িত থাকুক এখানে আসে নিজেদের ভেতরে যোগাযোগ রাখতে। যৌথ প্রযোজনার কাজের জন্য নিজেদের ভেতরে যোগাযোগও এখানে হয়। এখন সিনেমার বাজার এত বড় হয়ে গেছে যে, শুধু অর্থ লগ্নিই এর বিষয় নয়। অনেকে বিভিন্নভাবে এখানে সংযুক্ত হচ্ছে। সিনেমা এখন আর কোনো ভাষায় আটকে নেই। আপনি আপনার ভাষায় তৈরি করা যে কোনো প্রজেক্ট নিয়ে আসতে পারেন এখানে। এমনকি আপনার ভাবনায় থাকা কোনো ভালো গল্প বা আইডিয়া নিয়ে এখানে যেতে পারেন। খুঁজে নিতে পারেন আপনার গল্পকে সিনেমায় রূপ দিতে পারে এমন সবাইকে। আমি মনে করি প্রযোজক, পরিচালক বা অভিনয় শিল্পীসহ সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবারই এখানে যাওয়া উচিত। বাংলাদেশে বসেও আমরা যে বিশ্ববাজারে যাওয়ার মতো সিনেমা বানাতে পারি, তা এসব জায়গাতে গেলে বোঝা যায়। তবে আমাদেরকে জানতে হবে কোন পদ্ধতিতে বা ভাষায় বানালে কোন সিনেমাটা চলবে। এসব পদ্ধতি জানতে এবং বুঝতে এসব চলচ্চিত্র উৎসব এবং ফিল্ম বাজারে যাওয়া খুবই জরুরি। এভাবে যাওয়া-আসার মাধ্যমে আমাদের মার্কেট অনেক বড় হবে এবং আমরাও অনেক ভালো প্রজেক্ট এবং বড় প্রজেক্ট করতে পারব। বাংলাদেশে বসে জার্মান একজন পরিচালক বা ফরাসি একজন পরিচালকের মতো সিনেমা বানালে হবে না। এমনকি বাঙালি অনেক বড় পরিচালক যেমন সত্যজিৎ রায় বা ঋত্বিক ঘটকের মতো সিনেমা বানালেও হবে না। সিনেমা বানাতে হবে নিজের মতো করে। নিজের ভাষায় নিজের সিনেমা প্রকাশ করতে হবে। গল্পটা বলতে হবে নিজের ভাষায়। নিজের মতো করে যদি কেউ এভাবে সিনেমা বানাতে পারে আমার মনে হয় তাকে কেউ আটকাতে পারবে না। সবাই নিজেদের দ্বার উন্মোচন করলে তরুণরা অনেক দূর যেতে পারবে বলে আমার মনে হয়।
আজীবন সম্মাননা
এবার ৬৬তম বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আজীবন সম্মাননা পেলেন মাইকেল বালহাজ। তিনি একজন বিখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার। তার এত বেশি নামকরা সিনেমা আছে যে, তার নাম লিখতেই এক পাতা শেষ হয়ে যাবে। তবে দু’একটা বলতে গেলে গ্যাংস অব নিউইয়র্ক, দ্যা এজ অব ইনোসেন্স, গুড ফেলাস, মার্থ-এর নাম না বললেই নয়। ওয়ার্নার ফাস বাইন্ডার, কোপালাসহ বিখ্যাত বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন। তাকে বলা হয় মাস্টার অব দ্য মাস্টার। তিনি যখন কাজ করেছেন তখন টেকনোলজি এত অগ্রসর ছিল না। কিন্তু তবুও তার যে মুন্সিয়ানা তিনি দেখিয়েছেন, তা এখনকার আধুনিক টেকনোলজি দিয়েও অনেকে করে দেখাতে পারছে না। কীভাবে তিনি ওই পদ্ধতিগুলো রপ্ত করলেন তা সত্যিই অভূতপূর্ব বিষয়। তাকে এবার বার্লিনে সত্যিকার অর্থেই অনেক সম্মান দেয়া হয়েছে। তার সিনেমা দেখানো থেকে শুরু করে তার ওপর লেকচার ছিল, সেমিনারও ছিল। প্রতিদিনই তাকে নিয়ে কিছু আয়োজন ছিলই। এর দ্বারা তার সম্পর্কে জানলাম, দেখলাম এবং সেই সঙ্গে অভিভূতও হলাম। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। এই উৎসবে তার ট্রিবিউট হিসেবে গ্যাংস অব নিউইয়র্ক সিনেমাটি দেখানো হচ্ছিল সেদিন রাত ১২টায়। সিনেমা দেখানোর আগেই তাকে তার পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। উৎসবের সব সিনেমাই সঠিক সময়ে শুরু হলেও এই বিশেষ আয়োজন করতে গিয়ে এই সিনেমাটির প্রদর্শনী শুরু হয় অনেক দেরিতে। উৎসবস্থল থেকে আমার আবাসস্থল অনেকটা দূরে হওয়ায় ফেরার গাড়ি না পাওয়ার ভয়ে এবং পরের দিন আবার সময়মতো এসে উৎসবের আয়োজন দেখার জন্য বড় পর্দায় এই সিনেমাটি দেখার সুযোগ আমি হারালাম। প্রথম দিকে কিছুটা দেখে শেষ গাড়ি ধরতে শেষ না করেই বেরিয়ে পড়ি আবাসস্থলের উদ্দেশে।
জর্জ ক্লুনি এবং মেরিল স্ট্রিপকে দিয়ে শুরু করেছিলাম। এমনই কান, বার্লিন, টরেন্টো, বুসান বা যে উৎসবের কথাই বলেন, এগুলো হচ্ছে তারার মেলা। কাকে রেখে কাকে দেখবেন তা সত্যিই চিন্তার বিষয় হয়ে যায়। বিশ্বাসই হতে চায় না যে এভাবে তাদেরকে সামনে থেকে দেখছেন। সেখানে দেখা কার নাম বলব আর কার নাম বলব না তা ঠাওর করা কষ্ট। এটা নিয়ে হয়তো আরেকটি লেখা লিখতে হবে। তবে একটি বিষয় বলব, এই লেখাটি অনেকদিন পর লিখলাম বিধায় অনেক কিছু মনে করতে পারছি না। এরপর থেকে কোথাও গেলে দিন ভিত্তিক ফুটনোট রাখব, যাতে আরো বিশদ বিবরণ তুলে ধরতে পারি আপনাদের সামনে।
Comments