দেশে অটোমোবাইল নীতিমালা প্রণয়ন, কমবে আমদানি নির্ভরতা
সরকার দেশে প্রথমবারের মত অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২১ প্রণয়ন করেছে। আমদানি করা যানবাহনের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো, বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের ব্যবহার বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
এছাড়া, এ নীতিমালার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে গাড়ি উৎপাদনের আঞ্চলিক কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার।
নীতিমালা অনুযায়ী উদ্যোক্তাদের কর ও রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করা হবে, যেন দেশে অধিক সংখ্যক অটোমোবাইল কারখানা স্থাপন করা যায়।
বিনিয়োগকারীদের কোনো কর পরিশোধ ছাড়াই প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম আমদানি করে গাড়ি উৎপাদনের সুবিধার কথা উল্লেখ আছে নীতিমালায়।
এছাড়াও, বাণিজ্যিক গাড়ি উৎপাদনকারীরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ৪ বছরের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন।
গত মঙ্গলবার শিল্প মন্ত্রণালয় এ নীতিমালা প্রকাশ করে।
নীতিমালা অনুযায়ী, স্থানীয়ভাবে উৎপাদনকৃত বাণিজ্যিক যানবাহনকে বাজারজাত করার জন্য বিনিয়োগকারীরা ভর্তুকিসহ ঋণ পাবেন।
স্থানীয়ভাবে অ্যাসেম্বল করা গাড়ি অথবা সিকেডি (কমপ্লিটলি নকড ডাউন) গাড়ির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া হবে।
গত দুই দশক ধরে স্থানীয় অটোমোবাইল শিল্পকে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই খাতের প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক এবং এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতা ও জনসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান উপযোগিতার কারণে এই খাতটি এখন পরবর্তী ধাপে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় আছে।
'ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অটোমোবাইল শিল্প বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের অংশ হতে পারে' বলে নীতিমালায় আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ার কারণে গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।
নীতিমালার অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা, যার মাধ্যমে দেশের প্রগতিশীল অটোমোবাইল খাত সামনে এগিয়ে যেতে পারবে।
ব্যবহৃত বা রিকন্ডিশন করা গাড়ি আমদানিকে নীতিমালায় নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এর কারণ, স্থানীয়ভাবে অ্যাসেম্বল করা গাড়ি অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী হবে।
নীতিমালায় সরকারের একইসঙ্গে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকে আকর্ষণের কথা বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত যানবাহনের জন্য আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মিলিয়ে মানদণ্ড নির্ধারণ করবে।
সরকার স্থানীয় উৎপাদনকারীদের নতুন বাজারে প্রবেশ করতে সহায়তা দেবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, 'প্রগতিশীল ইজারা নীতির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গাড়িকে বাজার সম্প্রসারণ করতে সহায়তা করা হবে।'
বিনিয়োগকারীদের কারখানা স্থাপন করে যন্ত্রাংশ তৈরি ও সাশ্রয়ী গাড়ি, থ্রি-হুইলার, বাস, ট্র্যাক, ট্রাক্টর ও অ্যাম্বুলেন্স তৈরির জন্য অ্যাসেম্বলিং কারখানা বানাতে উৎসাহ দেওয়া হবে।
স্থানীয় ভোক্তাদের 'মেড ইন বাংলাদেশ' গাড়ি কেনার জন্য আয়কর রেয়াত দেওয়া হবে।
নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ জানান, এই নীতিমালা বাংলাদেশকে একটি অটোমোবাইল উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হতে সাহায্য করবে।
'ভোক্তারা উপকৃত হবেন, কারণ তারা সাশ্রয়ী মূল্যে গাড়ি কিনতে পারবেন', বলেন মাতলুব।
তিনি জানান, এই নীতিমালার কারণে স্থানীয় উৎপাদনকারীরা সেডান গাড়ি ১০ লাখ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে পারবেন, কারণ ভোক্তাদেরকে আমদানি শুল্ক দিতে হবে না।
রিকন্ডিশনড গাড়ি ব্যবসায়ী ও স্থানীয় গাড়ি উৎপাদনকারীদের সহায়তা দিতে সরকার রিকন্ডিশনড গাড়ির ব্যবস্থাপনার সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রণয়ন করবে।
এছাড়াও, অটোমোবাইল স্ক্র্যাপ করার জন্যেও একটি নীতিমালা তৈরি করা হবে। সরকার ডাম্পিং ও অন্যান্য অনৈতিক বাণিজ্য প্রতিরোধের জন্য অ্যান্টিডাম্পিং করের প্রচলন করবে।
সিকেডি কারখানা স্থাপনের উদ্দেশ্যে আমদানি করা যন্ত্রের ওপর এককালীন শতভাগ কর ও শুল্ক রেয়াত সুবিধা দেওয়া হবে।
সিকেডি পর্যায়ের উৎপাদনকারীদের যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ কর আরোপ করা হবে। তবে, যদি স্থানীয় বাজার থেকে যন্ত্রাংশ কেনা হয়, সেক্ষেত্রে নীতিমালা অনুযায়ী কর ১০ শতাংশের বেশি হবে না।
কারখানাগুলো ১ শতাংশ কর রেয়াত পাবে যদি তারা তাদের বার্ষিক আয়ের ১ শতাংশ গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে ব্যয় করে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বেশিরভাগ যানবাহন, বিশেষ করে যাত্রীবাহী গাড়ি, বাস, ট্রাক ও থ্রি হুইলারদের বিদ্যুৎচালিত যানে রূপান্তরের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎচালিত গাড়ি অ্যাসেম্বলার ও উৎপাদনকারীদের ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হবে।
বিদ্যুৎচালিত গাড়ির উৎপাদন বাড়িয়ে বায়ু দূষণের পরিমাণকে ন্যুনতম পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রণোদনা দেবে। যেমন, সড়ক কর রেয়াত ও সীমিত সময়ের জন্য হ্রাসকৃত নিবন্ধন খরচ ইত্যাদি।
বিদ্যুৎচালিত গাড়ির জন্য চার্জিং স্টেশন ও ব্যাটারি রিসাইক্লিং শিল্প চালু করা হবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।
Comments