বিমা পলিসি: সন্তানের বিয়ের আগাম পরিকল্পনা

আমাদের জীবনে এমন একটি পর্যায় আসে যখন অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। সে খরচের উৎস খুঁজে বের করতেও আমাদের বেগ পেতে হয়। সন্তানের বিয়ে এমনই একটি উপলক্ষ।
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের জীবনে এমন একটি পর্যায় আসে যখন অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। সে খরচের উৎস খুঁজে বের করতেও আমাদের বেগ পেতে হয়। সন্তানের বিয়ে এমনই একটি উপলক্ষ।

এক্ষেত্রে আগে থেকে সন্তানের নামে একটি বিমা পলিসি কিনে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, এতে করে বিয়ের উপলক্ষটি সামনে চলে আসলে আপনাকে আর অপ্রস্তুত হতে হবে না।

বিয়ের অনুষ্ঠানের খরচ জোগানোর জন্য 'ম্যারেজ এন্ডোমেন্ট পলিসি প্ল্যান' খুবই ভালো একটি বিকল্প হতে পারে।

বাংলাদেশের সরকারি বিমা প্রতিষ্ঠান, জীবন বিমা কর্পোরেশন এই স্কিমটি চালু করেছে। মূলত জীবন বিমা দেশের প্রথম বিমা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ ধরনের একটি স্কিম চালু করে।

এই স্কিমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা, যাতে তারা সহজে বিয়ের খরচ জোগাড় করতে পারে এবং অনুষ্ঠানটি পুরোপুরি উপভোগ করতে পারে।

বিমার প্রিমিয়ামের পরিমাণ বছরে সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ভোক্তার ইচ্ছে অনুযায়ী যেকোনো পরিমাণ হতে পারে। প্রিমিয়ামের পরিমাণ অভিভাবকের আয় অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে। ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী যেকোনো ব্যক্তি এটি নিতে পারেন। সর্বনিম্ন পাঁচ বছর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২০ বছরের জন্য পলিসি খোলা যায়।

এজেন্টের সহায়তায় অথবা সরাসরি বিমা প্রতিষ্ঠানের অফিসে গিয়ে এই পলিসি খোলা যাবে। উপজেলা পর্যায়ে জীবন বিমার ৪৫০টি অফিস আছে।

পলিসি খোলার জন্য ভোক্তার তিন কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং পলিসির সুবিধাভোগীর জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি ও ছবির প্রয়োজন হবে।

ম্যারেজ এন্ডোমেন্ট পলিসি প্ল্যান অন্যান্য বিমা সুবিধা থেকে ভিন্ন। এক্ষেত্রে স্কিমের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিমার পরিমাণ ও বোনাস পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

জীবন বিমা কর্পোরেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার শেখ খায়রুজ্জামান বলেন, 'পলিসি মালিক হঠাৎ মারা গেলে সকল প্রিমিয়াম রেয়াত দেওয়া হবে। এছাড়াও, বিমাকৃত মূল টাকা এবং মেয়াদ পূর্ণ হলে যতটুকু বোনাস পাওয়া যেত, তার পুরো পরিমাণটি দেওয়া হবে'

যে সন্তানের জন্য বিমা পলিসি খোলা হয়েছিল, তার মৃত্যু হলে শুধু প্রথম বছরের প্রিমিয়াম ছাড়া বাকি সব টাকা বোনাসসহ দেওয়া হবে। চাইলে অন্য কোনো সন্তানের জন্য পলিসিটি চলমান রাখা যাবে।

খায়রুজ্জামান বলেন, 'পলিসি মালিক ভবিষ্যতের জরুরি পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সব ধরনের খরচ মেটাতে পারবেন, যদি তিনি যথেষ্ট পরিমাণ সময়ের জন্য পলিসি কেনেন।'

গার্ডিয়ান লাইফ ইনস্যুরেন্সের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাকিবুল করিম জানান, গার্ডিয়ান লাইফের চাইল্ড প্রটেকশন প্ল্যান (সিপিপি) নামে একটি বেশ বলিষ্ঠ পলিসি আছে, যেটি ভোক্তাদের সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে।

পলিসির মেয়াদ শেষে হলে মালিক একটি আকর্ষণীয় ম্যাচুরিটি ও অর্জিত বোনাস পেতে পারেন। এই পরিমাণটি সন্তানদের উচ্চ শিক্ষা অথবা জীবনের অন্যান্য বড় মাইলফলক, যেমন বিয়ে, নতুন ব্যবসা শুরু করা অথবা বিদেশে অভিবাসনের খরচ জোগানোর ক্ষেত্রে উপকারি হতে পারে।

যদি কোনো পলিসি মালিক মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে মারা যান, সেক্ষেত্রে তার সন্তানকে বিভিন্ন ধরনের বাড়তি সহায়তা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে পলিসির মেয়াদ শেষে প্রতিশ্রুত অর্থের ১৫ শতাংশ শিগগির সন্তানের আইনি অভিভাবকের কাছে দেওয়া হয় যাতে তার পড়ালেখায় কোনো বিঘ্ন না ঘটে।

এরপর, পলিসির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মোট অর্থের এক শতাংশ প্রতি মাসে ভাতা হিসেবে দেওয়া হয়। যাতে সুবিধাভোগী সহজে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে। মেয়াদান্তে মূল টাকা এবং বোনাস সন্তানের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

রাকিবুল বলেন, 'এটি খুবই কার্যকর একটি পলিসি। যেটি পলিসির মালিক, তার পরিবার ও সন্তানদের জন্য খুবই উপযোগী হতে পারে।'

প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জালালুল আজিম বলেন, 'সকল বিমা প্রতিষ্ঠানের উচিৎ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের পলিসি চালু করা, কারণ এখানে অভিভাবকরাই সাধারণত সন্তানের বিয়ের খরচ যোগায়।'

বিয়েতে অনেক টাকা খরচ হয়, যে খরচ জোগাতে অনেক পরিবারকে বেশ কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সুতরাং একটি বিয়ে বিমা পলিসি তাদেরকে সাহায্য করতে পারে।

 

প্রতিবেদনটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Old, unfit vehicles taking lives

The bus involved in yesterday’s crash that left 14 dead in Faridpur would not have been on the road had the government not given into transport associations’ demand for keeping buses over 20 years old on the road.

1h ago