ঋণ নিয়ে চাঙ্গা রাখা হচ্ছে অর্থনীতি

দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে ঋণ নিচ্ছে সরকার, যা আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে ঋণ নিচ্ছে সরকার, যা আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বেশ কয়েকটি বড় আকারের উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যেগুলোর উদ্দেশ্য ছিল দেশের যোগাযোগ, পরিবহন ও জ্বালানী খাতকে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত করা।

সেগুলো মধ্যে ৮টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হলে দেশের জিডিপি ৪ শতাংশ বাড়তে পারে।

প্রতিবছর, কয়েক হাজার কোটি টাকা এসব প্রকল্প ও অন্যান্য অবকাঠামোগত প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে। ফলে, দেশের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি দীর্ঘ সময় ধরে স্থবির থাকলেও বেড়েই যাচ্ছে ঋণের পরিমাণ।

গত অর্থবছরের শেষের দিকে বাংলাদেশের মোট ঋণ বনাম জিডিপির অনুপাত গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৮ শতাংশে পৌঁছায়। যেটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশ করা ৭০ শতাংশের চেয়ে অনেক কম। সম্প্রতিকালে প্রকাশিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে। 

গত ৩০ জুন পর্যন্ত মোট অপরিশোধিত দেনার পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। যার ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া।

গত অর্থবছরের শেষের দিকে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। যেটি আগের ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। গত বছর ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ১৩ শতাংশ। যা আইএমএফের সুপারিশ করা ৫৫ শতাংশের চেয়ে অনেক কম।

বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'বর্তমান ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট দেনা সাসটেইনেবল।'

অন্যভাবে বলতে গেলে, বর্তমান প্রবৃদ্ধি ও অর্থায়ন পরিস্থিতিতে প্রত্যাশিত সীমার মধ্যে প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও দেনা সংক্রান্ত বিষয়ে উদ্বেগ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

জাহিদ হোসেন বলেন, 'এই সাসটেইনেবল অবস্থার সীমা ও জিডিপি অনুপাতের বর্তমান হারের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষাবলয় রয়েছে।'

তিনি জানান, দেনার ওপর ন্যূনতম সুদের হার হচ্ছে ৬ শতাংশ, যেটি ন্যূনতম জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে তুলনীয়। তিনি আরও জানান, প্রকৃত সুদের হার ১ শতাংশেরও কম।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, 'আমরা অতিরিক্ত ঋণ নেব না।' সরকার ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে একটি সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করেছে বলেও জানান তিনি।

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে থাকা অবস্থায় সরকার বড় আকারের ঋণ নেবে না, বলেও জানান অর্থমন্ত্রী।

'আমরা অনেক বেশি ঋণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমরা সব সময় জিডিপির অনুপাতে ঋণ নেব', বলেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেছেন, 'বাংলাদেশ কখনো ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। আমরা সময়মত ঋণ পরিশোধ করি। এজন্য উন্নয়ন অংশীদাররা আমাদের ওপর ভরসা রাখে।'

জাহিদ হোসেন জানান, সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, 'এ সুযোগ এখনো আছে, কারণ ছাড়ের মাধ্যমে ঋণের জন্য অর্থায়ন এখনো শেষ হয়ে যায়নি। অর্থাৎ, আমরা ঋণ অবকাঠামোর সংস্কার করে করে খরচ কমিয়ে আনতে পারি।'

'এ ধরনের সংস্কার কার্যক্রমের প্রয়োজন আছে, কারণ সুদের পেছনে জিডিপির ২ দশমিক ৩ শতাংশ ব্যয় হয়, যেটি জিডিপি প্রেক্ষাপটে শিক্ষাখাতের ব্যয়ের চেয়ে বেশি এবং কর থেকে পাওয়া মোট রাজস্বের এক পঞ্চমাংশ।'

আভ্যন্তরীণ দেনার ৪৮ শতাংশ এসেছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে, যার সুদের হার থাকে ১০ থেকে ১১ শতাংশের মধ্যে।

এর বিপরীতে, ব্যাংকিং সংক্রান্ত উৎসগুলোর সুদের হার ২ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে থাকে। ৪৬ শতাংশ অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে এসেছে।  

বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুদের হার এখনো ২ শতাংশের কম এবং পরিশোধের সময়সীমা ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।

অর্থমন্ত্রী আভাস দিয়েছেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও অদূর ভবিষ্যতে বিদেশি ঋণের সুদের হার বাড়বে না।

তিনি জানান, সরকার এখন উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করছে, যাতে দীর্ঘ মেয়াদে কম সুদের হারে ঋণ নেওয়ার সুবিধাটি অব্যাহত থাকে। বৈশ্বিক মহামারি পরবর্তী সময়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণকে টেকসই রাখার জন্য সরকার এই উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

২০২১-২২ অর্থবছরে সরকার ঋণ পরিশোধের জন্য ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৬৪৬ কোটি।

বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে ১ হাজার ৯০০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার ছিল

জাহিদ জানান, সরকারি বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটিয়ে ঋণের মাধ্যমে পাওয়া তহবিলের আরও উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করার সুযোগ আছে।

তিনি যোগ করেন, সরকারি বিনিয়োগ প্রকল্পগুলো শেষ হতে অনেক বেশি সময় লাগে এবং এগুলোর বাজেট প্রায়ই প্রাথমিক বাজেটের চেয়ে কয়েক গুণ বেড়ে যায়। 

ফাস্ট ট্র্যাকিং বা অগ্রাধিকার পাওয়া সর্বমোট ১০টি মেগাপ্রকল্পকে আলাদা করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হলে তা দেশের অর্থনীতি ও জনগোষ্ঠীর ওপর সার্বিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব আনবে।

গত এক দশকে এই প্রকল্পগুলোতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় নিশ্চিত করা সত্ত্বেও এগুলো এখনো শেষ হয়নি এবং নির্ধারিত সময়সীমা থেকেও অনেক পিছিয়ে আছে।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English

Over 60pc voter turnout in first phase

No major incident of violence reported; Modi expected to win rare third term

1h ago