নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশে ২০০৯ সালে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হয়। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে খুচরা কেনাবেচায় গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হিসেবে নিজের জায়গা শক্ত করেছে প্রযুক্তিনির্ভর এই খাত।

বাংলাদেশে ২০০৯ সালে ই-কমার্সের যাত্রা শুরু হয়। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশে খুচরা কেনাবেচায় গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হিসেবে নিজের জায়গা শক্ত করেছে প্রযুক্তিনির্ভর এই খাত।

তবে প্রায় ১২ বছর অতিক্রান্ত হলেও, এখন পর্যন্ত সরকার একটি সুনির্দিষ্ট ই-কমার্স নীতিমালা প্রচলনের তাগিদ অনুভব করেনি। সরকার এই দ্রুত বর্ধনশীল খাতে শৃঙ্খলা আনতে কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থাও তৈরি করেনি।

এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েই ইভ্যালি ও ধামাকা শপিংয়ের মতো অসাধু প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা ২০১৮ নামে একটি আইন থাকলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বছরের জুলাই মাসের আগে পর্যন্ত মানসম্মত কার্যপ্রণালীবিধি (এসওপি) ও নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি।

এই নীতিমালা অনুযায়ী একটি ই-কমার্স নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরি করার কথা থাকলেও সরকার এখনো সেটি তৈরি করেনি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আনোয়ারুল ইসলাম বাঁধন গত সোমবার দ্রুত ই-কমার্স নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরির নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন করেছেন।

স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসছে, সরকার কেন এই খাতের ব্যাপারে এতটা উদাসীন, যেটি কিনা বহু আরাধ্য ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম স্তম্ভ?

দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতারা বেশ কিছু সরকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন এবং তাদের মধ্যে দায় অস্বীকারের মানসিকতা লক্ষ্য করেছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় তখনই ই-কমার্স সেল গঠন করে, যখন কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা বিজ্ঞাপনের অভিযোগ আসে।

অসাধু প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অপকীর্তির দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা ইভ্যালির বিরুদ্ধে বানের জলের মতো অভিযোগ আসতে শুরু করারও প্রায় ৬ থেকে ৮ মাস পরে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সরকার সেলটি গঠন করে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাফিজুর।

গত বছর ইভ্যালির বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ আসতে শুরু করলে একাধিক সরকারি সংস্থার সমন্বয়ে একটি তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই তদন্তের সঙ্গে জড়িত ছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে (ডিএনসিআরপি), বাণিজ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

তদন্ত থেকে অবিশ্বাস্য ও ভয়াবহ সত্য উন্মোচিত হওয়ার পরেও ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটিকে স্বাভাবিকভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হয় এবং তারা আরও অসহায় ভোক্তা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করার সুযোগ পায়।

এখানেই শেষ নয়, ইভ্যালির মতো একই ধরনের কৌশল অবলম্বন করে আরও নতুন কিছু প্রতিষ্ঠান, যেমন 'ধামাকা শপিং' তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, 'ধামাকা শপিং' এখনো যৌথমুলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে অনুমোদনই পায়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ধীরগতির প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে হাফিজুর বলেন, এর জন্য সকল সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা দায়ী, যেমন: বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি), ডিএনসিআরপি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদক।

বিসিসির চেয়ারপার্সন মো. মফিজুল ইসলাম জানান, 'আমরা ইভ্যালিকে বড় মূল্যছাড়ের প্রচারণা বন্ধ করার জন্য নোটিশ পাঠিয়েছি এবং তাদের বিরুদ্ধে বিসিসির পক্ষ থেকে মামলাও করা হয়েছে।'

তবে বিসিসি অন্যান্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম, যারা একই ধরনের বিজ্ঞাপন ও বড় আকারের মূল্য ছাড়ের প্রচারণা করছিল, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি, কারণ তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো অভিযোগ আনেনি।

ডিএনসিআরপির মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা বলেন, ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব তাদের নিজেদের ওপরও বর্তায়।

তিনি জানান, ভোক্তারা অভিযোগ জানালে তারা ব্যবস্থা নেন। তিনি দাবি করেন, জুলাই ২০১৮ থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত আসা ভোক্তা অভিযোগের ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ তারা নিষ্পত্তি করেছেন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সরকারি সংস্থাগুলো তাদের দায়িত্বে অবহেলা করার কারণেই দেশে অসাধু ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম মাথাচাড়া দিয়েছে।

'এত বড় একটি শিল্পের ওপর নজর রাখার জন্য শুধুমাত্র একটি সেল গঠনই যথেষ্ট নয়', জানান তিনি।

তিনি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মতো একটি সংস্থা তৈরির সুপারিশ করেন, যেখানে বাণিজ্য, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা থাকবেন। তাদের দায়িত্ব হবে এই খাতের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতের কিছু প্রতিষ্ঠান সঠিক নিয়ম না মেনে কার্যক্রম চালাতে থাকে, যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে সেই খাতের সার্বিক সুশাসন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সংস্থাকে তারা কিছু প্রতিষ্ঠানের নিয়মভঙ্গ করার বিষয়ে জানিয়েছেন, কিন্তু যেহেতু এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আইন নেই, তাই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Diagnose dengue with ease at home

People who suspect that they have dengue may soon breathe a little easier as they will not have to take on the hassle of a hospital visit to confirm or dispel the fear.

9h ago