মন্ত্রিসভা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লজ্জাজনক অনুরোধ নাকচ করেছে

এটি অকল্পনীয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, কিংবা অন্য যে কেউ, গুরুতর অপরাধে অথবা দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের দায়মুক্ত করার প্রস্তাব রাখবে। কিন্তু মঙ্গলবারে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মন্ত্রণালয়টি ঠিক এই কাজটিই করেছে। সৌভাগ্যবশত, মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সবার শুভ বুদ্ধির বদৌলতে এই প্রস্তাবটি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।

এটি অকল্পনীয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, কিংবা অন্য যে কেউ, গুরুতর অপরাধে অথবা দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের দায়মুক্ত করার প্রস্তাব রাখবে। কিন্তু মঙ্গলবারে দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মন্ত্রণালয়টি ঠিক এই কাজটিই করেছে। সৌভাগ্যবশত, মন্ত্রিসভার বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সবার শুভ বুদ্ধির বদৌলতে এই প্রস্তাবটি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এ ধরনের দায়মুক্তি চাওয়ার পেছনে কারণ হচ্ছে সরকারি চাকরী আইন ২০১৮ পাশ হওয়া। আইনের একটি ধারার মাধ্যমে যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করার আগে অথবা তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে অভিযোগ আনার আগে বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, যা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জন্যও প্রযোজ্য। এই ধারাটি সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে যায়, কারণ সেখানে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে দেশের সকল নাগরিক সমান। 
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮'র ৪১(১) ধারা অনুযায়ী, সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো অনুমতির প্রয়োজন না হলেও কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করার আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিতে হবে। এছাড়াও ২০১৮'র আইনটি সরকারি কর্মচারীদের এক বছরেরও কম সময়ের জন্য দণ্ড পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে, যেটি অপরাধের গুরুত্ব বিচারে পিঠে চাপড় দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার মতো শাস্তি। এছাড়াও, সরকারি কর্মচারীদের চাকরির ওপর কোনো হুমকি না এনে তাদেরকে শুধুমাত্র মৌখিকভাবে সতর্ক করা, সাময়িক পদাবনতি দেওয়া অথবা তাদের বেতন না বাড়ানো, ইত্যাদি ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। বেশ কিছু মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০১৮ সালের আইনটি সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের দায়মুক্ত মনোভাব এনে দিয়েছে এবং তা ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ এনেছে। একই সঙ্গে এটি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পেশাদারী কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এবং অপরাধ ও দুর্নীতি দমনের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোকে কার্যকর ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা এনেছে। সেইসঙ্গে মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টিও বাঁধার মুখে পড়ছে।
সরকারি কর্মচারীদের এ ধরনের অবিশ্বাস্য পর্যায়ের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পরেও যেন তা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জন্য যথেষ্ঠ হয়নি। তারা আরও সুবিধা চাওয়ার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। একদিকে আমরা যেমন তাদের এই চাওয়ায় কিছুটা অবাক হয়েছি, আবার অপরদিকে, বিষয়টি খুব একটা বিস্ময়করও নয়। ২০১৮ সালের আইনটি পাশ করার মাধ্যমে সরকারই এ ধরনের দাবি জানানোর ক্ষেত্র তৈরি করে রেখেছে। এবং অবশ্যই কেউ না কেউ কোনো না কোনো এক সময় আইনটির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবে; বিষয়টি অবধারিতই ছিল।
আমরা খুশি যে মন্ত্রিসভার সদস্যদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছিল এবং তারা এই প্রস্তাবটি নাকচ করেছে, কিন্তু একই সঙ্গে আমরা আবারও জানতে চাই, সরকার কেন এই ধারাটি পাশ করেছিল, যেটি সরকারি কর্মচারীদের এই অন্যায্য সুবিধাটি দিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। কেন দুর্নীতি দমন ও সংবিধানকে অক্ষুণ্ণ রাখার ক্ষেত্রে দুদকের ক্ষমতাকে বলি দিয়ে সরকারি কর্মচারীদের দায়মুক্ত করতে হবে? আমাদের মতে এর পেছনে ভালো কোনো কারণ নেই এবং আমরা সরকারের কাছ থেকেও সেরকম কোনো কারণ সম্পর্কে জানতে পারিনি। এ অবস্থায় সরকারের উচিত শিগগির উল্লিখিত ধারাটি বাতিল করা।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

11h ago