বিশ্ব মানবপাচার প্রতিরোধ দিবস

একাধিক গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র পাচারের পর মানবপাচার হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরাধমূলক কার্যক্রম। মানবপাচারের সঙ্গে প্রথম দুটি অপরাধও প্রায়ই জড়িয়ে থাকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রগুলোর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কার্যক্রম হচ্ছে মানবপাচার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এই অপকর্মের জন্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। সম্প্রতি ইন্টারপোল ‘অপারেশন লিবারটেররা’ নামক অভিযানের বিস্তারিত জানিয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকটি দেশের কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে কাজ করে মানবপাচারের শিকার ৪৩০ জনকে উদ্ধার ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অপরাধে ২৮৬ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে অভিবাসী ও কিশোরী ছিল যাদের আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও সিরিয়া থেকে পাচার করে গ্রিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
ছবি: সংগৃহীত

একাধিক গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র পাচারের পর মানবপাচার হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরাধমূলক কার্যক্রম। মানবপাচারের সঙ্গে প্রথম দুটি অপরাধও প্রায়ই জড়িয়ে থাকে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধী চক্রগুলোর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কার্যক্রম হচ্ছে মানবপাচার। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশও এই অপকর্মের জন্য ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত। সম্প্রতি ইন্টারপোল 'অপারেশন লিবারটেররা' নামক অভিযানের বিস্তারিত জানিয়েছে, যেখানে বেশ কয়েকটি দেশের কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে কাজ করে মানবপাচারের শিকার ৪৩০ জনকে উদ্ধার ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অপরাধে ২৮৬ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে অভিবাসী ও কিশোরী ছিল যাদের আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও সিরিয়া থেকে পাচার করে গ্রিসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিবেদন ও গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ধারনা করা যায়, বাংলাদেশ থেকে মানবপাচার বেড়েই চলেছে। প্রকৃতই পাচারের সংখ্যা বেড়েছে, না কর্তৃপক্ষ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করায় আগের চেয়ে বেশি দক্ষ হয়েছে, তা বিচার করা কঠিন। তবে এটুকু নিশ্চিত যে প্রতি বছর হাজারো মানুষ পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ছেন। এর পেছনে মূলত দায়ী ভালো চাকুরীর আশায় মানুষের বিদেশে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। কিন্তু, তারা পাচার হচ্ছেন কি না বা জোরপূর্বক তাদের ক্রীতদাসের মতো কোনো কাজে আটকে রাখা হচ্ছে কি না, এসবের ঝুঁকি সম্পর্কে ভাল করে না জেনেই তারা বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ সরকার মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ভাল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে এবং পাচারের শিকার অনেককে উদ্ধারও করতে পেরেছে। একটি মার্কিন প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সাফল্যের কারণে মানবপাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকে দুই ধাপ উন্নীত করা হয়েছে। মানবপাচারের কিছু মূল হোতাকে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং জানা গেছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক মদদপুষ্ট অথবা তারা নিজেরাই ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদ। এ থেকে আরও বোঝা যায় কীভাবে সমাজের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান মানুষরা তাদের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দাসত্বের এই আধুনিক রূপটিকে চালু রেখেছেন। নিঃসন্দেহে, এতে মানব পাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আরও জটিল হয়ে গেছে। তারপরেও, কর্তৃপক্ষের উচিৎ এই অপরাধ দমনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া।

নিরাপদ অভিবাসনের প্রচারণা বাড়ানোর মাধ্যমে মানবপাচারের ঝুঁকি কমানোর উপযোগিতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। সরকারের উচিৎ সম্ভাবনাময় অভিবাসীদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ করা এবং তাদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। দেশ ত্যাগের আগে অভিবাসীদের আরও উন্নত ও প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহায়তা করা এবং বিদেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্যেও বিনিয়োগ করা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে দিনশেষে, এই অপরাধের প্রকৃতি বিচারে এবং পাচারকারীদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক বিবেচনায়, সরকারকে অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সুসংগঠিত মানব পাচার ও চোরাচালানের নেটওয়ার্কগুলোকে অকার্যকর করে এই অপরাধকে দমন করতে হবে।

প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান।

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

14h ago