বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রয়োজন সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গতকাল শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশব্যাপী ১৪ দিনের বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। গত ১৪ দিন ধরে দৈনিক শনাক্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশ এবং দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা গড়ে ২০৭। ফলে এটি স্পষ্ট যে, সংক্রমণ রোধ করতে হলে যতটা সম্ভব কঠোরভাবে ও দক্ষতার সঙ্গে এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
স্টার ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গতকাল শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশব্যাপী ১৪ দিনের বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। গত ১৪ দিন ধরে দৈনিক শনাক্তের হার প্রায় ৩০ শতাংশ এবং দৈনিক মৃত্যু সংখ্যা গড়ে ২০৭। ফলে এটি স্পষ্ট যে, সংক্রমণ রোধ করতে হলে যতটা সম্ভব কঠোরভাবে ও দক্ষতার সঙ্গে এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

তবে, বিধিনিষেধের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তরা যেন কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের সহায়তা না পেয়ে অসহায় অবস্থায় না পড়ে যান, আমাদের সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।

ইতোমধ্যে আমরা দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে শত শত যানবাহন আটকে থাকার এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে যাত্রীদের হেঁটে শহরের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানোর প্রতিবেদন দেখেছি। এই মানুষগুলো ঈদের ছুটি কাটানোর পর রাজধানীতে ফিরতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। যেহেতু বিধিনিষেধ শিথিল করার এবং  মানুষকে ছুটিতে ঢাকা ছাড়ার অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের ছিল, তাই এখন তাদের যতটা সম্ভব নিরাপদে ঢাকায় ফিরে আসার বিষয়টিও সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।

প্রথমদিন মানুষকে বিধিনিষেধ মেনে চলতে দেখেছি আমরা। এটি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। তবে, আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে যে অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এই ব্যাঘাত শ্রমজীবী মানুষ, বিশেষ করে দৈনিক উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল অনানুষ্ঠানিক শ্রমিকদের জন্য মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

ফলে দরিদ্রদের জন্য সরকার ঘোষিত সাম্প্রতিক ত্রাণ প্যাকেজ এই বিধিনিষেধ চলাকালে দ্রুত ও কার্যকর উপায়ে বণ্টন করা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ সহায়তার জন্য ঘোষিত ৪৫০ কোটি টাকার তহবিলটি বিতরণ জরুরি।

পাশাপাশি, খাদ্য সহায়তার জন্য ৩৩৩ হটলাইনটি কার্যকর করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা যেন ফোন করার জন্য কাউকে শাস্তি দেওয়ার ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটান তা নিশ্চিত করতে হবে।

জেলা হাসপাতালগুলোকে এখনও কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চাপ সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ভাইরাস সংক্রমণ কমানো না গেলে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই ভেঙে পড়তে পারে। ঈদকে সামনে রেখে বিধিনিষেধ শিথিলের আগে তিনি এ কথা বলেছিলেন এবং এটি ধরে নেওয়া যায় যে এ সময়ে ভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে।

তাহলে এ সময়টাতে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য কী করেছে?

চলতি মাসের শুরুতে দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, জেলা হাসপাতালগুলোতে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালের জায়গা ও ধারণক্ষমতা বাড়ানোর জন্য না হয় বেশি সময় লাগতে পারে। কিন্তু, আরও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম যত দ্রুত সম্ভব জেলা হাসপাতালগুলোতে পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য কঠিন কাজ ছিল না। এটি কি করা হয়েছে?

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি ঠিক কতটা গুরুতর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্মিলিতভাবে কাজ করেই শুধুমাত্র এই মহামারির ঝড় মোকাবিলা করতে পারি আমরা। দেশের মানুষকে যেমন বিধিনিষেধের নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে, তেমনি সরকারকেও উদ্যোগ নিতে হবে এবং এ বিপজ্জনক সময়ে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

এখন পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি সরকারি সিদ্ধান্তই এসেছে কোনো একটি সংকটের প্রতিক্রিয়া হিসেবে। কোনো সংকট ঘটার আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে তেমন একটা দেখা যায়নি। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের সঙ্গে কথাটি একেবারেই মিল যায়।

বিধিনিষেধকে কার্যকর করতে হলে, এ বিষয়টিতে পরিবর্তন আনতে হবে। বিধিনিষেধ ফলপ্রসূ করতে আমাদের সামাজিক সুরক্ষা বলয় প্রয়োজন। এমন একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রয়োজন— যা কোভিড-১৯ আক্রান্তদের জীবন রক্ষায় সেবা দিতে সক্ষম।

Comments

The Daily Star  | English
IMF lowers Bangladesh’s economic growth

IMF calls for smaller budget amid low revenue receipts

The IMF mission suggested that the upcoming budget, which will be unveiled in the first week of June, should be smaller than the projection, citing a low revenue collection, according to a number of finance ministry officials who attended the meeting.

48m ago