নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করুন

বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা এই মুহূর্তে খুবই হতাশাজনক। রাস্তার অবস্থাও বেশ করুণ। উদাহরণ হিসেবে পোস্তোগোলা থেকে চাষাঢ়ার রাস্তার কথা বলা যায়।
uttara_road_22oct21.jpg
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল শিক্ষার্থীর হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছেন অভিভাবক। ছবিটি উত্তরা রাজউক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে তোলা। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

বাংলাদেশের সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা এই মুহূর্তে খুবই হতাশাজনক। রাস্তার অবস্থাও বেশ করুণ। উদাহরণ হিসেবে পোস্তোগোলা থেকে চাষাঢ়ার রাস্তার কথা বলা যায়।

এই সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোস্তোগোলা থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত পুরো রাস্তায় গর্ত। তবে এটি অবাক করার মতো কিছু না। বিপদ শুরু হয় যখন বৃষ্টি নামে, আর পুরো রাস্তা হাঁটু পানিতে ডুবে যায়। সে সময় সব ধরনের যানবাহনের জন্যই ওই রাস্তায় নিরাপদে যাতায়াত করার বিষয়টি অসম্ভব হয়ে পড়ে।

গত মঙ্গলবার সকালেও এমন হয়েছিল। সেদিন ওই রাস্তায় অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যান গর্তে পড়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই রাস্তায় এ ধরনের অন্তত ৮টি দুর্ঘটনা ঘটে।

এই ধরনের দুর্ঘটনাগুলোতে অনেক সময় যাত্রী ও চালকরা গুরুতর আহত হন। পাশাপাশি মালিকদের মেরামতের খরচ নিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

এটি ঢাকা বিভাগে সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির একটি উদাহরণ। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর হার অন্তত ৪০ শতাংশ বেড়েছে।

চলতি বছরের মে মাসে সবচেয়ে বেশি ৫৪৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে সময় সরকারের দেওয়া কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে সড়কে গণপরিবহন কম চলাচল করেছে এবং এ কারণে ঈদের সময় বাড়িতে ছুটে যাওয়ার জন্য মানুষ অনিরাপদ পরিবহন (যেমন- ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল) বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাভাবিক সময়েও সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের দেশে সাধারণ ঘটনা।

যারা নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশা করেন, তাদের মধ্যে ২০১৮ সালের প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনের ক্ষণিকের আশা জাগিয়েছিল। কিন্তু ৩ বছর পরেও আইনটি অনেকাংশে অকার্যকর থেকে গেছে। এই আইনের খসড়া এখনো বিআরটিএ ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

আইনটি বাস্তবায়ন না হওয়ার পাশাপাশি মুলতুবি সংশোধনীগুলো এটাই নির্দেশ করে যে, রাস্তায় মানুষের জীবনের চাইতে পরিবহন মালিক ও সমিতিগুলোকে কর্তৃপক্ষ বেশি অগ্রাধিকার দেয়।

যদি বর্তমান খসড়া অনুসারে আইনটি সংশোধন করা হয়, তাহলে দেখা যায় যে এর অন্তত ১৪টি ধারার অধীনে শাস্তি কিংবা জরিমানা কমানো হবে। বেপরোয়াভাবে ও অবহেলা করে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ আহত হলে চালককে দায়ী করার জন্য আইনটি তার এখতিয়ার হারাবে। কেবল দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে এই এখতিয়ার থাকবে।

দুর্ঘটনার পরিমাণ কমিয়ে আনাই যদি আইনটির উদ্দেশ্য হয়, তাহলে কেন এমন ছাড় দেওয়া। যেখানে চালকদের জবাবদিহির জন্য কিছুই করা হবে না?

তার ওপর সরকার সম্প্রতি গাড়ির কাগজপত্র যথাসময়ে হালনাগাদ করতে ব্যর্থ হওয়ার ক্ষেত্রেও বিলম্ব জরিমানা মওকুফ করেছে। সড়ক পরিবহন আইনের অধীনে বিধিমালা প্রণয়নে বিলম্বের পাশপাশি এই ধরনের ছাড় সরকারের ওপর পরিবহন সমিতিগুলোর প্রভাবকেই তুলে ধরছে। আজ জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা দিবসে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে, তাদের কর্তব্য হলো জনসাধারণের জন্য সড়ককে নিরাপদ রাখা।

আমরা সড়ক পরিবহন আইন দ্রুত চূড়ান্ত করে এর কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানাই। পরিবহন সমিতির মালিকদের চাওয়া সাধারণ মানুষের নিরাপদ যাতায়াতকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না।

Comments

The Daily Star  | English

Cuet students suspend protests

Say authorities assured them of meeting their major demands

3h ago