নাঈমসহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের বিচার চাই

গত ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লা ফেলার গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের এক ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা আমাদের দেশের সড়ক নিরাপত্তার করুণ চিত্রটি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। সকালে কলেজে যাওয়ার সময় ডিএসসিসির গাড়ির নিচে চাপা পড়েন নটরডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম হাসান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লা ফেলার গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম হাসান নিহতের প্রতিবাদে রাজপথে শিক্ষার্থীরা। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

গত ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ময়লা ফেলার গাড়ির ধাক্কায় নটরডেম কলেজের এক ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনা আমাদের দেশের সড়ক নিরাপত্তার করুণ চিত্রটি আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। সকালে কলেজে যাওয়ার সময় ডিএসসিসির গাড়ির নিচে চাপা পড়েন নটরডেম কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম হাসান।

ডিএসসিসির ময়লা ফেলার গাড়ির ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে গাড়িচালক তাকে চাপা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন নাঈম।

জানা গেছে, যে ময়লার গাড়িটি নাঈমকে চাপা দিয়েছে সেটি ডিএসসিসির নিযুক্ত কোনো চালক নন, একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী চালাচ্ছিলেন।

গতকাল ২৫ নভেম্বর চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় এক সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে বিআরটিসি বাস ধাক্কা দেয়। ওই সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ কলেজ ছাত্র নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন।

দুটি ঘটনার ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার পরপর চালকরা পালিয়ে যান। এই সম্পাদকীয়টি লেখার সময়, শহরের পান্থপথ এলাকায় আরেকটি দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়া গেছে, যেখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আরেকটি ময়লার গাড়ি দৈনিক প্রথম আলোর সাবেক কর্মচারী আহসান কবির খানকে চাপা দিয়েছে।

নাঈমের বিচার ও পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণসহ ৬ দফা দাবিতে ঢাকা শহর জুড়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। তারা বলছেন, ২০১৮ সালের সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের সময় যে দাবি তোলা হয়েছিল আজ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ সেগুলো পূরণ করেনি।

সড়কে প্রতিদিনই মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন, অথচ সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কখনোই গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ২২২ জন প্রাণ হারিয়েছেন।

২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকার সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়ন করে, যা এখনও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবিতে সরকার আইনের বেশ কয়েকটি ধারা শিথিল করেছিল, যা যাত্রীদের স্বার্থ পরিপন্থী।

আইন বাস্তবায়নে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার ফলাফল হলো আমাদের সড়ক পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে, যার ফলে আমাদের সড়কে মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা বাড়ছে।

আমাদের সড়ক নিরাপত্তা যাতে আরও অবনতি না হয়, সেজন্য সরকারকে অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন করতে হবে। আইনটি কার্যকর করতে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট সব অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত।

নাঈমের মৃত্যুর ঘটনায় আমরা ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাই, কেন নিয়োগপ্রাপ্ত চালকের পরিবর্তে একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে ভারী যানবাহন চালানো হচ্ছিল? ডিএসসিসির মালিকানাধীন ৩১৭টি ভারী যানবাহনের জন্য মাত্র ৮৬ চালক থাকার বিষয়টি এই প্রশ্নের কিছুটা হলেও উত্তর দেয়।

আমরা আশা করি, ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিগুলো এই সংকটের শেকড়ে থাকা প্রকৃত সমস্যাগুলো খুঁজে বের করবে। আমাদের সড়ক নিরাপদ করতে কর্তৃপক্ষের যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। অজুহাত দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে!

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

Sajek accident: Death toll rises to 9

The death toll in the truck accident in Rangamati's Sajek increased to nine tonight

4h ago