নতুন ই-কমার্স নীতিমালায় গ্রাহকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

বাংলাদেশে ই-কমার্স শিল্পকে আরও ভালোভাবে এবং সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারি ও বিতর্কে জড়িয়েছে এবং অন্তত ১৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কয়েক হাজার কোটি টাকা দেনায় পড়েছে।

বাংলাদেশে ই-কমার্স শিল্পকে আরও ভালোভাবে এবং সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন আর্থিক কেলেঙ্কারি ও বিতর্কে জড়িয়েছে এবং অন্তত ১৩টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কয়েক হাজার কোটি টাকা দেনায় পড়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞ ও ভোক্তা অধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, এমন একটি ডিজিটাল ই-কমার্স নীতিমালার প্রয়োজন যেটি বাধ্যতামূলক হবে এবং নীতিমালা লঙ্ঘনকারীদের শাস্তির উল্লেখ থাকবে। বিদ্যমান ন্যাশনাল ডিজিটাল কমার্স পলিসি ২০১৮-তে সম্প্রতি একটি গাইডলাইন জারি হলেও আইনি প্রতিকারের কোনো সুযোগ নেই।

আমরা নতুন ই-কমার্স নীতিমালার খসড়াটি সমর্থন করি। এতে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী উভয়কেই প্রতারণামূলক কার্যকলাপ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনিক ও বিচারিক ব্যবস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে, অবশ্যই তাদের গোপনীয়তা রক্ষায় গুরুত্বের ওপর জোর দিতে হবে।

গত মাসে ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) তৈরি খসড়া নীতিমালায় দেশের প্রতিটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে শিগগির একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আওতায় নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে, সেই প্ল্যাটফর্মের পর্যবেক্ষণ করবে একাধিক রাষ্ট্রীয় সংস্থা।

খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, প্ল্যাটফর্ম নিরীক্ষণ করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি), কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা এবং ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) প্ল্যাটফর্মটি পর্যবেক্ষণ করবে। এর অর্থ হলো তাদের কাছে এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অর্ডার ও ডেলিভারি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য থাকবে এবং এর মাধ্যমে ডিলারদের ব্যাপারে তথ্য এবং তাদের আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিতও জানা যাবে।

কেন এতোগুলো সরকারি সংস্থার এই সব তথ্য জানা প্রয়োজন? অন্যায়ের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার আগে কোনো প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজের বিবরণ পড়ার পরিবর্তে অভিযোগের সমাধান করার জন্য একটি সঠিক ব্যবস্থা থাকা কি আরও অর্থপূর্ণ নয়?

খসড়া নীতি অনুসারে, প্রতিটি ই-কমার্স সংস্থাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মটির জন্য নিবন্ধন করতে হবে; তা না হলে তাদের ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হবে না। নিবন্ধন করার সময়, তাদের পাসপোর্টের তথ্য এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্যসহ তাদের ব্যবসায়িক মডেলের তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছিলেন যে, কয়েকটি জাপানি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা করার কথা ভাবছে। বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের কতটুকু তথ্য প্রকাশ করতে হবে এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থা তাদের কার্যক্রম কতটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে সেটি জানলে তারা কি একইরকম আগ্রহ দেখাবে?

ই-কমার্স শিল্পে প্রতারকদের হাত থেকে বাংলাদেশি ভোক্তাদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষা করে এমন একটি নীতিমালা নিয়ে আসা আমাদের জন্য খুবই জরুরি। কিন্তু এর সঙ্গে তাদের গোপনীয়তার অধিকার রক্ষার বিষয়টিও জড়িত, যা এই সর্বশেষ খসড়া নীতিমালায় তেমন বিবেচনাই করা হয়নি।

সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে নীতিমালাটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে কি না। ই-কমার্স একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। সাম্প্রতিক বিতর্ক সত্ত্বেও কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনীতিকে চাঙা করতে ই-কমার্সের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে৷

অনুবাদ করেছেন সুচিস্মিতা তিথি

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka denounces US 2023 human rights report

Criticising the recently released US State Department's 2023 Human Rights Report, the foreign ministry today said it is apparent that the report mostly relies on assumptions and unsubstantiated allegations

39m ago