দুদককে শৃঙ্খলমুক্ত করুন

আইনি বাধার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অর্থ পাচার প্রতিরোধে যথাযথ ভূমিকা না রাখতে পারা একটা নীতিবিরুদ্ধ অবস্থা। শিগগির এই বাধা দূর করা উচিত। দুদকের একজন কমিশনারের মতে, দেশের কিছু মানুষ কোটি কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আইনি বাধার কারণে দুদক এ বিষয়ে কিছু করতে পারছে না।

আইনি বাধার কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অর্থ পাচার প্রতিরোধে যথাযথ ভূমিকা না রাখতে পারা একটা নীতিবিরুদ্ধ অবস্থা। শিগগির এই বাধা দূর করা উচিত। দুদকের একজন কমিশনারের মতে, দেশের কিছু মানুষ কোটি কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু আইনি বাধার কারণে দুদক এ বিষয়ে কিছু করতে পারছে না।

২০১৯ সালে সরকার মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা প্রণয়ন করে। এতে ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে নির্দিষ্ট অপরাধের তদন্ত করতে নির্দিষ্ট সংস্থার ওপর দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়। বিধিমালায় ২৭ ধরনের মানি লন্ডারিং সম্পর্কিত অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) নিজে কিংবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে সঙ্গে নিয়ে ২৪ ধরনের অপরাধের তদন্ত করবে। দুদক কেবল দুর্নীতি ও ঘুষ সংক্রান্ত মানি লন্ডারিং অপরাধের তদন্ত করবে। এনবিআর ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর ও পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অপরাধের তদন্ত করবে।

সরকার যদি অন্যান্য সংস্থাকে মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত ভার দিতে চায়, সেটা খুবই ভালো। কিন্তু এ ধরনের মামলা তদন্তে দুদকের সংশ্লিষ্টতা কেন সীমিত করা হয়েছে?

মানি লন্ডারিং বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৭৫৩ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ পাচার হয়। এই অর্থের পরিমাণ ওই সময়ের বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো দেখলে বোঝা যায় যে অর্থ পাচার কেবল বাড়ছেই। সুতরাং সরকারের উচিৎ মানি লন্ডারিং ঠেকাতে ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা। এ ধরনের মামলার তদন্তের ক্ষেত্রে সরকারের কোনো সংস্থার ওপর কোনো ধরনের বাধা থাকা উচিৎ না।

বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা লক্ষ্য করছি, সরকার ধীরে ধীরে দুদকের স্বাধীনতা সীমিত করে দিয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধ ও এ সংক্রান্ত মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে সংস্থাটির ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সরকারি সংস্থাগুলোকে অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ ইতোমধ্যেই আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। দুদকও এ কারণে যথেষ্ট কার্যকর হতে পারেনি। সংস্থাটি ইতোমধ্যে যদি 'নখদন্তহীন বাঘে' পরিণত না-ও হয়ে থাকে, আইনি বাধার কারণে হয়তো শিগগির তা হয়ে যাবে।

আমরা মাঝেমাঝেই ক্ষমতাসীন দলকে বলতে শুনি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারা 'জিরো টলারেন্স' নীতি অবলম্বন করছে। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ড ভিন্ন কথা বলছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার যদি সত্যিই আন্তরিক হয়, তবে দুদকসহ দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করা অন্যান্য সংস্থাগুলোকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেওয়া উচিৎ। একইসঙ্গে এটাও উল্লেখ করা দরকার যে, আইনি বাধাই দুদকের একমাত্র সমস্যা নয়। উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের ধরতে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় সাহসের অভাব বোধ করেছেন। তবে, সেই সাহস দুদককে নিজেরই অর্জন করে নিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Foreign airlines’ $323m stuck in Bangladesh

The amount of foreign airlines’ money stuck in Bangladesh has increased to $323 million from $214 million in less than a year, according to the International Air Transport Association (IATA).

13h ago