অতি প্রয়োজনীয় শিক্ষা সংস্কার বাস্তব হওয়ার পথে

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত সোমবার সংশোধিত জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা উন্মোচন করেছেন। এ রূপরেখা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।
ছবি: স্টার

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত সোমবার সংশোধিত জাতীয় শিক্ষাক্রমের রূপরেখা উন্মোচন করেছেন। এ রূপরেখা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।

নতুন শিক্ষাক্রমের খসড়া অনুযায়ী, দশম শ্রেণির আগে কোনো পাবলিক পরীক্ষা হবে না এবং তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোনো পরীক্ষা হবে না। শিক্ষার্থীদের নবম শ্রেণির বদলে একাদশ শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ ভাগ করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া, স্কুলের মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে।

এখানে উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে এসব পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়ে আসছেন। সরকার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের সুপারিশ বাস্তবায়নে এত সময় নেওয়ায় আমরা হতাশ হয়েছি। তবে, অবশেষে বাস্তবতা স্বীকার করে এসব পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়ায় কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করছি।

শিক্ষাবিদরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, পিইসিই ও জেএসসির মতো পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ওপর প্রচুর মানসিক ও শারীরিক চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া আর কিছুই করে না। পরীক্ষার প্রতি জাতীয় ঘোর শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করার দিকে ধাবিত করছে এবং তাদেরকে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা ও সমস্যা সমাধান থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে। শিক্ষা মূলত গাইড বই ও কোচিং সেন্টার কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে।

ফলে, শিক্ষার্থীরা সুন্দর একটি একাডেমিক অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হারাচ্ছে। সুতরাং, এসব পরীক্ষা বাতিল একটি ভালো উদ্যোগ। এ ছাড়া, নতুন পাঠ্যক্রমে সামগ্রিক মূল্যায়ন, অর্থাৎ পরীক্ষার চেয়ে নিয়মিত স্কুলের কাজের মতো বিষয়ের ধারাবাহিক মূল্যায়নের ওপর জোর দেওয়ার প্রস্তাব আছে।

আমরা নতুন পাঠ্যসূচিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তন নিয়ে আনন্দিত। তবে, শিক্ষকদের এখন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। নতুন মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার অধীনে শিক্ষকদের সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা মূল্যায়ন করতে হবে। সেজন্য তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ থাকা দরকার। এ ছাড়া, নতুন পদ্ধতির আওতায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষকদের এই নতুন শিক্ষাদানের কৌশল ও মূল্যায়ন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য  সরকারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা উচিত।

বর্তমান পাঠ্যক্রম থেকে ভালোভাবে নতুন পাঠ্যসূচিতে যাওয়ার জন্য সরকার ২০২৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করবে। ফলে কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশিকা প্রণয়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবে। কাজটি দ্রুত ও ফলপ্রসূ করার জন্য আমরা এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদেরকে যুক্ত করার জন্য জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English
Civil society in Bangladesh

Our civil society needs to do more to challenge power structures

Over the last year, human rights defenders, demonstrators, and dissenters have been met with harassment, physical aggression, detainment, and maltreatment by the authorities.

8h ago