৯০ এর আন্দোলনের ৩ দশক: ফিরে দেখা আমাদের আকাঙ্ক্ষা ও অর্জন

আজ থেকে ৩ দশক আগে সামরিক জান্তা এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ বছর আন্দোলনের পর তার পতন হয়েছিল। সে আন্দোলনে প্রায় ৩৭০ জন জীবন দিয়েছিলেন, পঙ্গু-গুম হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। হরতাল হয়েছিল প্রায় ১ বছর ৩২৮ দিন! অবরোধ হয়েছিল ৭০ দিন। জাতীয় সম্পদ ও আর্থিক ক্ষতিও হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার।

আজ থেকে ৩ দশক আগে সামরিক জান্তা এরশাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ বছর আন্দোলনের পর তার পতন হয়েছিল। সে আন্দোলনে প্রায় ৩৭০ জন জীবন দিয়েছিলেন, পঙ্গু-গুম হয়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। হরতাল হয়েছিল প্রায় ১ বছর ৩২৮ দিন! অবরোধ হয়েছিল ৭০ দিন। জাতীয় সম্পদ ও আর্থিক ক্ষতিও হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার।

দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সেই সংগ্রামে আমরা কী অর্জন করেছি? সব আন্দোলনের একটা আকাঙ্ক্ষার দিক থাকে। ৯০ এর আন্দোলনেরও ছিল। কী সেই আকাঙ্ক্ষা? মোটা দাগে বলতে গেলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, শিক্ষা, কৃষি-শিল্প-স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, ঘুষ-দুর্নীতি রোধ ইত্যাদি। সে সময় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ১০ দফা, ৩ জোটের রূপরেখা ব্যাপক সমর্থন পায় ও গণদাবীতে পরিণত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৬ ও ১১ দফার মতোই এটি কাজ করে। সে আকাঙ্ক্ষার কী হলো?

সামরিক শাসকের ক্ষমতা দখল

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক বাহিনীর প্রধান হোসাইন মোহাম্মাদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ক্ষমতা দখল করেই সামরিক ফরমান 'এমএলআর ৮২' জারি করেন। এতে বলা হয়, যেকোনো ভাবে সামরিক শাসনের বিরোধিতা করলে ৭ বছরের জেল। তথাকথিত এই কালো আইনে হাজারো রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার হয়। ক্ষমতা দখল করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তিনি কথা রাখেননি। বরং বেসামরিকীকরণ প্রক্রিয়ায় নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন। সুবিধাবাদীদের নিয়ে দল গঠন ও প্রহসনের নির্বাচন করেন। দুর্নীতি-লুটপাটের মচ্ছব চলতে থাকে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত করেন। ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হত্যা-খুন-গুম-দমন-পীড়নের রাজনীতিতে নিজেকে বিশ্ব বেহায়ায় পরিণত করেন।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের প্রক্রিয়া

এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সকল ছাত্র সংগঠন ও রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ জানায়। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষও এতে যোগ দেয়। স্বৈরাচারকে মোকাবিলায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে বোঝাপড়ার পরিবেশ তৈরি হয়। নানা প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের মধ্যে জোট-ঐক্য গড়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলো শেষে ৩টি জোটে ঐক্যবদ্ধ হয়। ৮, ৭ ও ৫ দলীয় জোট। আন্দোলন জোরদার করতে ৩ জোটের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়। ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যেও ২টি জোট গড়ে ওঠে, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও সংগ্রামী ছাত্র জোট। আন্দোলন আরও জোরদার করতে ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর জেহাদের মরদেহ সামনে রেখে ২৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য গঠন করা হয়।

জোট-ঐক্যে বোঝাপড়ার ক্ষেত্র

আন্দোলনের সময়ে জনগণ ও রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে থেকে চাপ আসতে থাকে এরশাদ পতন পরবর্তী কর্মসূচী নিয়ে। দল-জোটগুলোও সে তাগিদ উপলব্ধি করে। রাজনীতিকের নীতিহীন স্বার্থপরতায় মানুষ ক্ষুব্ধ। ক্ষমতা দখল ও রক্ষার নেতিবাচক রাজনীতি মানুষ আর দেখতে চায় না। সে পরিস্থিতিতে ৩ জোটের রূপরেখা ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ১০ দফা প্রণীত হয়। 

৩ জোটের রূপরেখা কী ও কেন

৩ জোটের রূপরেখা হচ্ছে স্বৈরাচার হটানোর পর ক্ষমতা হস্তান্তরের রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি-প্রক্রিয়ার একটি দলিল। এই দলিলকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব হচ্ছে এর মূল ঘোষণা এবং দ্বিতীয় পর্বে আচরণ বিধি। এটি ৪টি ধারা ও ৮টি উপধারার একটি ছোট দলিল। কিন্তু অল্প পরিসরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা উত্তরণ ও ধারাবাহিকতার একটি পরিষ্কার নির্দেশনা এতে ছিল। যে ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা গেলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অনেক সমস্যার সমাধান হতো।

৩ জোটের রূপরেখার ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

১। নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা: যে সরকার ৩ মাসের মধ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করবে, রুটিন দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করবে এবং সবার জন্য একটি সমতল ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে।

২। রাজনৈতিক আচরণবিধি সংক্রান্ত: অবাধ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনে দলগুলোর করণীয় ও অঙ্গীকার এর অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং স্বৈরাচারের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও অস্ত্রধারীদের কোনো দলে স্থান না দেওয়া।

৩। নির্বাচন পরবর্তী সরকারের করণীয়: যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল সংসদকে কার্যকর করে সরকারের স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং জনগণের অধিকার হরণকারী সকল কালো আইন বাতিল করা। ৩ জোটের রূপরেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার ছিল নির্বাচনে প্রদত্ত জন রায় মেনে চলা। অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা দখলের সকল প্রচেষ্টা প্রতিরোধ করা এবং নির্বাচন ব্যতীত কোনো অজুহাতে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত না করা।

সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের ১০ দফা

ঐক্যবদ্ধ ছাত্র আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছাত্রদের মধ্য থেকে দাবী উঠে আসে জাতীয় রাজনীতিতে ছাত্রদের স্বার্থের বিষয়টি যুক্ত করতে হবে। সে আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেই সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের পক্ষ থেকে ১০ দফা ঘোষণা করা হয়। তখন ছাত্র ঐক্য থেকে বলা হয়েছিল, যারাই ক্ষমতায় আসবে তাদেরকে এই দাবী কার্যকর করতে ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু নির্মম সত্য হলো সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের প্রধান ২ শরীক সংগঠন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের অভিভাবক সংগঠন একাধিকবার ক্ষমতায় গেলেও ছাত্রসমাজের রক্তে ভেজা সেই প্রাণের দাবী বাস্তবায়িত হয়নি, গুরুত্বও পায়নি।

কী ছিল সেই ১০ দফায়?

৫ পৃষ্ঠার এই দাবীনামাকে দেশের সামগ্রিক জাতীয় উন্নয়নের একটি সুনির্দিষ্ট লিখিত নির্দেশনা বলা যায়। যেখানে দেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের স্বার্থের বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ভূমিহীন খেতমজুর-শ্রমিক-কর্মচারী, ব্যবসায়ী-আমলা, নারী-শিশুসহ সমাজের নানা স্বার্থের মানুষদের বিষয়ে বক্তব্য ছিল। রাজনৈতিক দল, সরকার পদ্ধতি ও পরিবর্তন, আইন-বিচার-শাসন বিভাগের ক্ষমতা, সংবাদপত্র, বাকস্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, কৃষি-শিল্প-স্বাস্থ্য-পরিবেশ-সমাজ-অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয় এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১০ দফার ১ এর ক, খ ও গ'তে মধ্য ফেব্রুয়ারি হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ক্ষতিপূরণ, সকল ছাত্রনেতাদের মামলা প্রত্যাহার, সামরিক শাসকদের হস্তক্ষেপ ও দমননীতি বন্ধ করা, ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অক্ষুণ্ণ রাখা।

২ এর ক থেকে জ পর্যন্ত গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, একটি বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক ও একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালুকরা, ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক-বাধ্যতামূলক ও জাতীয়করণ করা, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো, সঠিক ইতিহাস সম্বলিত উপযুক্ত পাঠ্যসূচী প্রণয়ন, শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি, শিক্ষা শেষে কাজের নিশ্চয়তা।

৩ এর ক থেকে চ তে বলা হয়েছে ছাত্র কনসেশন, ন্যায্য মূল্যে শিক্ষাপোকরণ সংগ্রহ করা, আমদানিকৃত শিক্ষা পণ্যের উপর থেকে ট্যাক্স প্রত্যাহার করা, হল-হোস্টেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, শিক্ষার মান বৃদ্ধি ও যুগোপযোগী করা, কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব ও ছাত্রবৃত্তি বাড়ানো ইত্যাদি।

১০ দফা কি ছাত্রদেরই দাবি ছিল?

১৯৮৩ সালের ২৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা সত্ত্বেও অপরাজেয় বাংলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ দফা দাবির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। সামান্য পরিবর্তনে ৯০'র অক্টোবরে তা হয়ে ওঠে সমগ্র ছাত্রসমাজের দাবি। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ১০ দফার স্লোগান মন্ত্রের মতো উচ্চারিত হতো। এই ১০ দফার ৩৫টি উপধারা। সেখানে ১, ২ ও ৩ নম্বরটি ছিল সরাসরি ছাত্র সমস্যা ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দাবি। বাকী ৭ দফা দাবি ছিল শ্রেণী-পেশা ও আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়াবলী।

কী হলো সেই ১০ দফার?

৯০ গণআন্দোলনের অনেক ছাত্রনেতা পরবর্তীতে সংসদ সদস্য হয়েছেন, মন্ত্রীও হয়েছেন। সে পরিচয়-গৌরব কাজে লাগিয়ে পদ-পদবি অর্জন করেছেন, অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। কিন্তু সেই চেতনার কথা কেউ মনে রাখেননি। তাদের অনেকে সে ১০ দফায় কী ছিল তা পড়েও দেখেননি। কিন্তু তাদের সবাই নিজেদের সে অভ্যুত্থানের মহান নেতা হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব করেন। যেসব তরুণ-যুবক জীবন বাজি রেখে সংগ্রাম করেছেন, নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জীবন, পরিবার, বিপর্যয়ের কথা কে মনে রাখে? কে রাখে জেহাদ আর তার রক্তস্নাত ১০ দফার খবর? ৯০'র চেতনার মুষ্টিবদ্ধ শপথ নষ্ট রাজনীতির অন্ধকার গলিতে আজ হারিয়ে গেছে।

কেমন ছিল সেই সংগ্রামের দিনগুলো

এক কথায় সে সংগ্রামের দিনগুলো ছিল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক। সামরিক শাসক সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। সভা-সমাবেশ-মিছিল মতো প্রকাশসহ সব ধরনের নাগরিক অধিকার রদ করেছিল। ছাত্ররাও হয়ে উঠেছিলাম তার বিপরীতে প্রচণ্ড বেপরোয়া। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন, হামলা-মামলা, হত্যা-গুম, নির্যাতন চলছিল সমান তালে। ছাত্ররাও পদে পদে স্বৈরাচারের বাঁধার সৃষ্টি করেছিল। সে সময় বিবিসির সান্ধ্য অধিবেশন ছিল সারাদেশের পরিস্থিতি জানার উপায়। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই হরতাল-বিক্ষোভ চলতো। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে শহরের অলিগলিতে ঝটিকা মিছিল হতো। মুহূর্তেই বুটের খট্‌খট্ শব্দ, সাইরেন, হুইসেল এক মহাআতঙ্কের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো। এভাবেই পার হয়েছিল মাস, বছর।

কার্ফ্যু, সান্ধ্য আইন, দেখামাত্র গুলির নির্দেশ, দুইয়ের অধিক চলাফেরা নিষেধ ছিল। সে পরিস্থিতিতে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে। শহরে আর্মি ট্রাকের ঘনঘন টহল হয়েছে; কয়েকজনের গ্রুপ করে করে মিছিল করেছি; এক গলিতে শুরু করে দৌড়ে আরেক গলিতে মিলিয়ে গেছি; ককটেল, পেট্রল বোমা ছুড়ে পূর্ব পরিকল্পনায় যে যার মতো দ্রুত সটকে পরেছি; ফের নির্দিষ্ট স্থানে মিলিত হয়েছি; পরবর্তী অপারেশনের ছক কষে বেড়িয়ে পরেছি; হামলা, মামলা, হুলিয়া, কারাগার, আত্মগোপন ছিল আমাদের পায়ে পায়ে। প্রতিপক্ষ ও পুলিশের মুখোমুখি হওয়া ছিল প্রতিদিনের বিষয়।

রাতে দলবেঁধে হরতাল-অবরোধ কার্যক্রমে বের হয়েছি; ঝোপঝাড়, খালের ভেতর দিয়ে, এর ওর বাড়ির ছাদ, টিনের চাল খুব সতর্কে কোনো শব্দ না করে পা টিপে টিপে নিরাপদে পার হয়েছি; কারো বাসায় খাওয়াই ছিল আহারের সংস্থান। খুব শ্বাসরুদ্ধকর ছিল সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সংগ্রামের সে দিনগুলো। এখন এ স্মৃতি হয়তো অনেক বন্ধুর দারুণ নষ্টালজির কারণ হবে।

কী অর্জন করলাম?

জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের কারণ। অনেক মূল্যে এ ভূখণ্ড পেলেও গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও আর্থ-সামাজিক মুক্তির প্রশ্নটি আজও অধরা। আমাদের স্লোগান ছিল ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও মুক্তির! ৯ বছর সেই সংগ্রামের ৩ দশক পরও ভাবি, এত প্রাণ, এত ত্যাগের বিনিময়ে কী অর্জন করেছি আমরা? কী পেল স্বদেশ? সেই বেদনা, বঞ্চনা, ক্ষোভ, দুর্ভাগ্য, প্রতারণা প্রতিদিন তাড়া করে। নেতৃত্বের পতন-পঁচন ও রাজনীতির আরও রুগ্ন অবস্থা দেখে কেবলি মনে হয়, আমাদের সেই সংগ্রাম কি তবে ছিল সম্মিলিতভাবে এক বিশাল সময় ও শক্তির অপচয়? এটাই কী আমাদের অর্জন?

ড. মঞ্জুরে খোদা: গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)

Comments

The Daily Star  | English
Cuet students block Kaptai road

Cuet closes as protest continues over students' death

The Chittagong University of Engineering and Technology (Cuet) authorities today announced the closure of the institution after failing to pacify the ongoing student protest over the death of two students in a road accident

1h ago