05:47 PM , Dec 24, 2016
05:47 PM , Dec 24, 2016 / LAST MODIFIED: 05:47 PM , Dec 24, 2016

আশকোনায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান: আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত ২

সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন এক নারী। বাড়ির পার্কিংয়ে তার দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ। বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ।

স্টার অনলাইন রিপোর্ট

আশকোনায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান: আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত ২
বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে সংবাদ ব্রিফিং করে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ছবি: শাহীন মোল্লা

ঢাকার দক্ষিণখানের পূর্বপাড়া আশকোনায় জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চলাকালে পৃথক বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। নিহত দুজনের মধ্যে একজন জঙ্গি সুমনের স্ত্রী ও একজন কিশোর বয়সী ছেলে।

সূর্য ভিলা নামের বাড়িটির নিচতলায় ওই নারী বোরকার নিচে রাখা সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মারা যান। তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম জানা যায়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন। বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে সংবাদ ব্রিফিং করে তিনি এ ঘোষণা দেন। তিনি জানান, অভিযানে চারজন আত্মসমর্পণ করেছেন ও দুই জন নিহত হয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার সানোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চার বছরের একটি মেয়েকে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে আসেন বোরকা পরিহিতা এক নারী। বাইরে এসেই বোরকার নিচে রাখা সুইসাইড ভেস্টে বিস্ফোরণ ঘটান তিনি। তার সাথে থাকা শিশু সাবিনাকে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বিস্ফোরণের পর ওই নারীর দেহ রক্তাক্ত অবস্থায় পার্কিংয়ের জায়গায় পড়ে থাকে বলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোজিম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, সাবিনার বুকে ও হাতে স্প্লিন্টারের আঘাত লেগেছে। সূত্রটি জানায় সাবিনা তার বাবার নাম ইকবাল ও মায়ের নাম সাকিরা বলে জানিয়েছে। তবে এই দুজনের পরিচয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।

দুপুরের পর থেকেই ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ শোনা যায়। ঘটনাস্থলে থাকা আমাদের সংবাদদাতা জানান, বিস্ফোরণের পর পরই ভবনটির দিকে বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার গ্যাস মারে পুলিশ।

সংবাদদাতা জানান, ডিএমপির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের পরিদর্শক অভিযান চলাকালে আহত হন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

দুপুর ২টার দিকে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্য, তদন্ত কর্মকর্তা ও ফায়ার ফাইটাররা ভবনটিতে ঢুকে জঙ্গিদের দমন করার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিটকে তখন প্রস্তুত থাকতে দেখা যায়। এর আগে ভবনটিতে থাকা লোকজনকে সরিয়ে নিতে সমর্থ হয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

জঙ্গি কমান্ডার মেজর জাহিদের স্ত্রী ও তিন জনের আত্মসমর্পণ

আত্মসমর্পণকারী চার জনের মধ্যে মধ্যে নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার মেজর (অব) জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা ও তার কন্যা রয়েছেন। পুলিশ জানায়, আত্মসমর্পণকারী অপর নারী হলেন পলাতক জঙ্গি মুসার স্ত্রী। তিনিও তার কন্যাকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আশকোনার পূর্বপাড়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের জানান, বাড়িটির নিচতলার ফ্ল্যাটে থাকা অপর তিন জঙ্গিকে আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করছে পুলিশ।

গত ২ সেপ্টেম্বর রূপনগরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মেজর জাহিদ নিহত হয়। রূপনগরে অভিযানের এক সপ্তাহ পর আজিমপুরে একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শিলা।

সূর্য ভিলা নামের তিনতলা বাড়িটিতে জঙ্গিরা অবস্থান করছে সন্দেহে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের একটি দল রাত ২টার দিকে অভিযান শুরু করে।

আশকোনায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান: আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিহত ২
জঙ্গি আস্তানা সূর্য ভিলা থেকে নব্য জেএমবির সামরিক কমান্ডার মেজর (অব) জাহিদের স্ত্রী ও কন্যাসহ চার জন আত্মসমর্পণ করেছেন। ছবি: ডিএমপি

ডিএমপির ডেপুটি কমিশনার (গণমাধ্যম) মাসুদুর রহমান জানান, লাউড স্পিকারে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে বলার পর সকাল পৌনে ১০টার দিকে ধারালো অস্ত্র ও একটি পিস্তল নিয়ে দুই শিশুসহ দুই নারী আত্মসমর্পণ করেন। তাদেরকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

কে এই মেজর জাহিদ

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্য মতে গত বছর জুলাই মাসে স্বেচ্ছা অবসরে যান জাহিদ (৩৭)। অবসর নেওয়ার সময় তিনি মেজর পদে ছিলেন। এ বছর জুলাই মাসে তার এলপিআর শেষ হয়েছে। তার বাড়ি কুমিল্লায়।

পুলিশ জানায়, জাহিদ গত এপ্রিলে পরিবারের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে তথাকথিত জিহাদে যোগ দেয়।

প্রায় আট মাস আগে তিনি সর্বশেষ তার গ্রামের বাড়ি পশ্চিম চাঁদপুরে গিয়েছিলেন। নিয়মিত যাতায়াত বা মেলামেশা না থাকায় জাহিদের ব্যাপারে খুব কম কথাই জানে স্থানীয় লোকজন।

ঢাকায় জাহিদের পরিচিত তিন জন জানান, ২০০০ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৪৩তম লং কোর্সে প্রশিক্ষণ শেষে কমিশনপ্রাপ্ত হন জাহিদ। একটি কোর্স সম্পন্ন করার জন্য ২০১৩-১৪ সালে সেনাবাহিনী তাকে কানাডার সশস্ত্র বাহিনীর জুনিয়র স্টাফ কলেজে পাঠায়

তাঁরা জানান, কানাডা থেকে ফিরে ২০১৪ সালে জাহিদ ধর্মীয় কাজের দিকে ঝুঁকে পড়েন। চাকরির বিভিন্ন বিষয় তার নৈতিকতা ও ধর্মবিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিকহওয়ার কথা বলে সেনাবাহিনী ছাড়ার ব্যাপারে বন্ধুদের সাথেও কথা বলেন তিনি।

Click here to read the English version of this news

পাঠকের মন্তব্য

অন্যান্য সংবাদ