TU, AUG 16, 2016
03:58 PM, AUG 16, 2016 / LAST MODIFIED: 03:58 PM, AUG 16, 2016

মতামতঃ খালেদার জন্মদিন পালন না করা কী বার্তা বহন করে?

ইনাম আহমেদ

khaleda-zia-birthday

বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া গতকাল তাঁর জন্মদিন পালন না করে যে রাজনৈতিক বার্তা দিলেন তার ফলাফল কি হবে সেটা লক্ষ্য রাখার মত একটি বিষয়।

১৯৯৫-৯৬ সালের পর থেকে এই প্রথমবারের মত আগস্ট ১৫ তারিখে তিনি তার জন্মদিন পালন করেননি। ১৯৭৫ সালের আগস্ট ১৫ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এক সামরিক অভ্যুথানে নিহত হন, যা বাংলাদেশের রাজনীতির গতিধারা চিরদিনের মত বদলে দেয়।

হঠাৎ করে এই শোকের দিনটিতে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালনের ব্যাপারটি রাজনৈতিক ভাবে এতটাই দৃষ্টিকটূ ছিল যে কেউ ভেবেও পাননি এই কাজের মাধ্যমে খালেদা জিয়া এবং তাঁর দল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগকে কি ধরনের রাজনৈতিক বার্তা পাঠাচ্ছেন। যেভাবে বঙ্গবন্ধুর পরিবার বিশেষ করে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে আঘাত করার জন্য তিনি মধ্যরাতে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করতেন, সেটা আমাদের লজ্জায় কুঁকড়ে দেয়।

খালেদা জিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট অনুযায়ী তাঁর জন্ম তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর, বিবাহ সনদ অনুযায়ী ৫ আগস্ট আর প্রধান মন্ত্রীর শপথ অনুযায়ী ১৯ আগস্ট উল্লেখ করা আছে। অথচ এই দিনগুলোর বদলে তিনি আগস্ট ১৫ কেই বেছে নেন তাঁর জন্মদিন পালনের জন্য। ব্যাপারটা এরকম যে ১৯৭৫ এর এই মর্মান্তিক ঘটনাটিকে তিনি যেন স্বাগতম জানাচ্ছেন, উদযাপন করছেন। প্রতি বছর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে যেন একটি বিভেদ রেখা আঁকা হয়েছে বারবার। যেন এর মাধ্যমে বিএনপি জানিয়ে দিতে চায় যে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মতাদর্শের কতটা বিরোধী তাঁরা।

অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তিই তাঁকে এই কাজ বন্ধ করার উপদেশ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি শুনেননি।

শেষ পর্যন্ত এই বছরে তিনি এই কাজ বন্ধ করেন।

খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি অবশ্য এখনও বলেনি যে ১৫ই আগস্টের শোকের কথা মাথায় রেখে এই জন্মদিন পালন বাতিল হয়েছে। বরং বিএনপি বলেছে বর্তমান পরিস্থিতি, বন্যা এবং খালেদা জিয়ার পরিণত বয়সের কথা বিবেচনা করে তা বাতিল করা হয়েছে। দল যাই বলুক, কঠিন রাজনৈতিক বাস্তবতার মুখোমুখি খালেদা জিয়া যে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তায় পরিবর্তন এনেছেন, জন্মদিন পালন বাতিলের সিদ্ধান্ত তারই ইঙ্গিত দেয়। বিএনপির এখন ভগ্নদশা এবং প্রায় নয় বছর ধরে ক্ষমতা বঞ্চিত তারা। তাঁর এক ছেলে মারা গেছে এবং অন্য একজন নির্বাসিত। বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এমন কি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

যে কাঁটার বেড়া দিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি বিভক্ত সেটা সংস্কারের মত বড় একটা কাজ বাকি আছে খালেদার। অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা শুধরাতে হবে দলটিকে।

এত কিছুর মধ্যেও তাঁর এই ইঙ্গিত অবশ্যই কিছু বার্তার জন্ম দিয়েছে। অপর পক্ষ সেটা কীভাবে গ্রহণ করে এবং তার জবাব দেয় সেটা দেখার জন্যে অপেক্ষা করছি আমরা।

পাঠকের মন্তব্য