ড্রাগন ফ্রুটে সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন খাগড়াছড়ির কৃষকরা

মেক্সিকোর ফল ড্রাগন ফ্রুট। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও চীনে এই ফলটির বাজার রমরমা। সে দিক থেকে ড্রাগন ফ্রুট বাংলাদেশে নতুনই বলা চলে। কয়েক বছর হল খাগড়াছড়ির কয়েকজন উৎসাহী কৃষক ড্রাগন ফ্রুট চাষ শুরু করেছেন। সেখানকার অন্তত চারজন কৃষক ড্রাগন ফ্রুটকে বাঙালির ফলের তালিকায় আনতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন।
খাগড়াছড়ি সদরের ললিত করবরি পাড়ায় একটি ড্রাগন ফ্রুটের বাগান। ছবি: সৈকত দেওয়ান

মেক্সিকোর ফল ড্রাগন ফ্রুট। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও চীনে এই ফলটির বাজার রমরমা। সে দিক থেকে ড্রাগন ফ্রুট বাংলাদেশে নতুনই বলা চলে। কয়েক বছর হল খাগড়াছড়ির কয়েকজন উৎসাহী কৃষক ড্রাগন ফ্রুট চাষ শুরু করেছেন। সেখানকার অন্তত চারজন কৃষক ড্রাগন ফ্রুটকে বাঙালির ফলের তালিকায় আনতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন।

ড্রাগন ফ্রুটের গাছ অনেকটা লতানো ক্যাকটাসের মত দেখতে হয়। ২০১৩ সালে খাগড়াছড়ির মাইসছড়ি গুচ্ছগ্রামে খাগড়াছড়ি এগ্রো গার্ডেন নামের একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম এর চাষ শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন বাণিজ্যিকভাবে দেশের সবচেয়ে পুরনো ও সর্ববৃহৎ ড্রাগন ফ্রুট উৎপাদনকারী।

খাগড়াছড়ি এগ্রো গার্ডেনের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ জুলহাস তার বাগান সম্পর্কে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাড়ে পাঁচশ ড্রাগন ফ্রুটের ঝোপ রয়েছে তাদের। গত বছরই তারা প্রথম ফলন পেয়েছেন। সেবার বাগান থেকে প্রায় ২০০ কেজি ড্রাগন ফ্রুট এসেছে যার দাম প্রায় এক লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে তারা ১৫০টি গাছ থেকে ফল পাবেন বলে আশা করছেন।

তিনি জানান, খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সেন্টারের সহযোগিতা নিয়ে তাদের বাগানটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তারা আশা করছেন এবার অন্তত ২৫০ কেজি ড্রাগন ফ্রুট সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

ড্রাগন ফ্রুটের ক্যাকটাস বেড়ে উঠার জন্য প্রতিটি ঝোপে একটি করে কংক্রিটের পিলার স্থাপন করা হয়। এই পিলারের ওপর একটি রাবারের টায়ার বেঁধে দেওয়া হয়। এতে ভর করেই ড্রাগন ফ্রুটের ক্যাকটাসগুলো বেড়ে ওঠে।

নিজের বাগানে ড্রাগন ফ্রুট ক্যাকটাসের যত্ন নিচ্ছেন সামর ত্রিপুরা। ছবি: সৈকত দেওয়ান

অন্য ক্যাকটাসের ফুলের মতই ড্রাগন ফ্রুটের ক্যাকটাসেও রাতারাতি ফুল ফুটে। সকালের রোদ পড়তেই এর ফুল সতেজতা হারিয়ে ফেলে। রাতের বেলা চলাফেরা করে এমন মথ ও বাদুর ড্রাগন ফ্রুটের পরাগায়নের কাজটি করে। নিজে থেকেই পরাগায়ন ঘটে এমন জাতেরও ড্রাগন ফ্রুট রয়েছে। তবে যে জাতের ড্রাগন ফ্রুটে বাইরের কীটপতঙ্গের মাধ্যমে পরাগায়ন হয় সেগুলোতেই তুলনামূলকভাবে উন্নত মানের ফল আসে।

ড্রাগন ফ্রুট চাষ করা হচ্ছে এমন আরেকটি বাগানের তত্ত্বাবধায়ক রুস্তম আলী। তিনিও হর্টিকালচার সেন্টার থেকে এই ফল চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। হর্টিকালচার সেন্টারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “ড্রাগন ফ্রুট চাষে খুব বেশি যত্ন নেওয়া লাগে না। ফুল ফোটা থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত পাঁচ মাসের মত সময় লাগে।” রুস্তম আলীর মতে ড্রাগন ফ্রুট চাষ অত্যন্ত লাভজনক।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে ড্রাগন ফ্রুট চাষ করছেন খাগড়াছড়ির সামর ত্রিপুরা। গত মাসে দ্য ডেইলি স্টারের এই প্রতিবেদকদের সাথে তার কথা হয়। তিনি জানান, গত বছর খাগড়াছড়ির এগ্রো গার্ডেনে ড্রাগন ফ্রুট দেখে তিনি এর ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সেখান থেকে এসে তিনি ললিত করবরি পাড়ায় ড্রাগন ফ্রুটের বীজ বপন করেন। তিনি বলেন, “১৩০টি ঝোপে ড্রাগন ফ্রুটের বীজ বুনেছিলাম। এর মধ্যে ৪০টিতে ইতিমধ্যে ফল এসেছে। আশা করছি আগামী বছর থেকে পুরো মাত্রায় উৎপাদন শুরু হবে।”

হর্টিকালচার সেন্টারের পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন ড্রাগন ফ্রুট সম্পর্কে জানান, অল্প বৃষ্টিপাত হয় এমন অঞ্চলেও এর চাষ করা যায়। থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মত দেশগুলোতে ড্রাগন ফ্রুট গুরুত্বপূর্ণ ফসল। এখানকার পার্বত্য এলাকাগুলোতে এর চাষে সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। ড্রাগন ফ্রুটের বীজ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে ওখানকার কৃষকদের অপ্রচলিত এই ফলটি চাষে উদ্বুদ্ধ করছে হর্টিকালচার সেন্টার।

ড্রাগন ফ্রুট এখনও অনেকের কাছেই অজানা। কিন্তু ভোক্তাদের মধ্যে ফলটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ড্রাগন ফ্রুট চাষের সাথে সংশ্লিষ্টরা। মহালছড়ি উপজেলার ড্রাগন ফ্রুট চাষি হালশিমং চৌধুরীর ভাষায়, “এই এলাকার মানুষ ড্রাগন ফ্রুটের সাথে পরিচিত নয়। কিন্তু সুস্বাদু ও রসালো এই ফল দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।”

Click here to read the English version of this news

Comments

The Daily Star  | English

First phase of India polls: Nearly 50pc voter turnout in first eight hours

An estimated voter turnout of 40 percent was recorded in the first six hours of voting today as India began a six-week polling in Lok Sabha elections covering 102 seats across 21 states and union territories, according to figures compiled from electoral offices in states

1h ago